লুঙ্গি-গামছায় অন্য রকম এক সংসদ সদস্য

কোন কোন সংসদ সদস্যর বিরুদ্ধে আছে খুনের অভিযোগ, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি অর্জনের, আবার অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ। তবে তাদের চেয়ে আলাদা আর অন্যরকম সংসদ সদস্যও আছেন। তিনি এস এম জগলুল হায়দার। সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য।

নির্বাচিত হবার পর গত ৩ বছর ধরে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন তিনি। আপামর জনতার সঙ্গে মিশে থাকার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা তার।

জগলুল হায়দারের এসব কর্মকাণ্ড কয়েক বছর ধরে চাপা থাকলেও সম্প্রতি লুঙ্গি, গামছা পরে সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে মাথায় করে মটি নিয়ে বাঁধ নির্মাণের ছবি ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে। এরপরই তিনি আসেন অালোচনায়। তার শত ব্যস্ততার মাঝেও শত শত শ্রমিকের সঙ্গে সবসময় এভাবে কাজে নেমে যাবার কারণটা কি?

উত্তর মেলে এই সাংসদের কাছ থেকেই। এস এম জগলুল হায়দার বলেন, ‘গত ৩ বছর যাবৎ আমি আমার এলাকায় থেকে কাজ করে যাচ্ছি। অামি সবসময় চাই দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করতে। চাই সব জনপ্রতিনিধিরা মাঠপর্যায়ে নেমে কাজ করুক। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেয়াই আমার লক্ষ্য। আমি যখন তাদের সঙ্গে কাজ করি তখন তারাও অনেক বেশি উৎসাহিত হয়। তাদের মত লুঙ্গি, গামছা পরে যখন আমি তাদের সঙ্গে কাজে নামি তখন তাদের অনেক কাছের মানুষ হিসেবে গণ্য হই আমি। তারা আমাকে তাদের আপন ভাবতে শুরু করে। কাজের প্রতি তাদের উদ্যম বেড়ে যায় দ্বিগুণ।’

‘‘অনেক ক্ষেত্রে তারা পারিশ্রমিকও কম নেয়। সরকারি কাজে ফাণ্ড আসতেও অনেক সময় দেরি হয়। সেক্ষেত্রে আমি কাজে গেলে সবাই এগিয়ে আসে খুব সহজেই কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। অনেকে এসে যোগ দেয় কাজে। স্বেচ্ছাসেবক হয়ে অংশ নেয়।’’

‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এ ধরণের কাজের কোন বিকল্প নেই। এসি বাড়ি গাড়ি পরিহার করে জনপ্রতিনিধিরা মাঠে নেমে আসলেই গড়া সম্ভব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ।’

জগলুল হায়দার সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের মতো করেই মিশতে চান। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে তাদের পাশে থাকতে চান। সাধারণ মানুষের কষ্টটা তাদের মতো করেই বুঝতে চাওয়ার এক প্রবণতা দেখা যায় তার মাঝে ।

‘‘গ্রীষ্মের দাবদাহে তপ্তদুপুরে শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে কষ্ট করে কাজ করে আমি তাদের কষ্টটা উপলদ্ধি করতে চাই। আর এজন্যই আমার কাজ করা। আমি এভাবেই কাজ করে যেতে চাই সাধারণ মানুষের জন্য। আমার দেশের জন্য।’’

সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে আইলা বিধ্বস্ত শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব দূর্গাবাটি এলাকার সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার। নির্বাচিত হবার পর থেকেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকার মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় তিনি।

এমপিরা প্রকল্প দেখতে গিয়ে লম্বা লম্বা নির্দেশনা দেন। কিন্তু ব্যতিক্রমি এক ঘটনা ঘটালেন সাতক্ষীরার সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার। তিনি বাঁধ নির্মাণের শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমিক বনে গেলেন!

সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, সাতক্ষীরার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটি এলাকায় খোলপেটুয়া নদী ভাঙনে বিশাল এক সমস্যায় পড়েছে ওই এলাকার মানুষ। ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিকে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ। এই নির্মাণ কাজ তদারকি করতে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার। তিনি বাঁধ নির্মাণ দেখতে গিয়ে নিজেও নেমে পড়লেন টুকরি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে। শ্রমিকদের সঙ্গেই মাটি তুলে মাথায় করে নিয়ে ফেললেন নদীর ধারে। দেখে মনে হবে তিনি যেনো একজন পুরদস্তুর শ্রমিক!

এই বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলাতে। রবিবার সকালে সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার এভাবে শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করেছেন পুরো এক ঘণ্টা। এই সময় তিনি পোশাক হিসেবে বেছে নেন লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি। আবার শ্রমিকদের মতোই তাঁর কোমরে বাঁধা ছিল গামছা। মাথায়ও শ্রমিকদের মতো করে বাঁধা গামছাটির ওপরেই তোলা হয় মাটির টুকরিটি।

অন্যান্য শ্রমিকদের মতোই সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার দূর হতে মাটি নিয়ে এসে ফেলছেন বাঁধে- এমন একটি দৃশ্য দেখে যে কেও হতভম্ভ হবেন সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু স্থানীয়রা এখন আর এমন দৃশ্য দেখে আগের মতো অবাক হন না। এর কারণ হলো সংসদ সদস্য জগলুল এটা প্রথমবারের মতো করেননি। এর পূর্বেও একাধিকবার এই কাজ করেছেন তিনি। শ্রমিকের মতোই মিশেছেন সাধারণের সঙ্গে, কাজ করেছেন তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁদ মিলিয়ে, যেনো এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!
জানেন কি?

সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারের এই মাটি বয়ে নিয়ে বাঁধে ফেলার ছবিটি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষ তাঁর এমন কাজের জন্য ভূয়সি প্রশংসা করেছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সহযোগী একটি সংবাদ মাধ্যমকেকে বলেছেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী এলাকার নদীর ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমি একঘণ্টা শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করেছি।’

জগলুল হায়দার আরও বলেছেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকাটি আসলে আইলা দুর্গত, সুন্দরবন পাশ ঘেরা, বঙ্গোপসাগরের পাশে অবস্থিত। বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন হয়। যখনই সেখানে ভাঙ্গন দেখা দেয়, তখনই সেখানে আমি ছুটে যায়। শ্রমিকদের সঙ্গে লুঙ্গি পরে কাজ করি। এতে করে শ্রমিকরা তাদের কাজে আরও উদ্বুদ্ধ হয়, আবার তাদের কাজেও আগ্রহ বাড়ে।

সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার ওই সংবাদ মাধ্যমকে আরও বলেছেন, ‘শুধু শ্রমিকদের উৎসাহ নয়, জনপ্রতিনিধিদের জনসম্পৃক্ত হয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে আগ্রহ তৈরি করার উদ্দেশ্যেই আমি এমন ধরনের কাজ করছি। এতে করে জনগণের মধ্যেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আবার আমার দেখে অনেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও এমন কাজ করছে।’

জগলুল হায়দার বলেছেন, ‘আমি এখনও লুঙ্গি পরে ও ফতুয়া গায়ে দিয়ে গ্রাম এলাকায় যাচ্ছি। সেখানে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবো।’

সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার মনে করেন, ‘একজন এমপি শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ কিংবা গাড়ি-বাড়িতে থাকার জন্য নয়। তাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

এভাবেই সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এই সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেন। তাঁর মতো করে যদি সবাই এলাকার জন্য, এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাধারণভাবে মিশতেন তাহলে দেশের অনেক সমস্যা আর থাকতো না।