প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের সঙ্গে এক যৌনকর্মীর ভালোবাসার অবিশ্বাস্য গল্প

জীবনে কঠিন সময় আসতে পারে। এমনকি অনেক সময় নিষ্ঠুরও হতে পারে। যদিও বলা হয় ভালোবাসাই সর্বোত্তম ওষুধ; তবে এই ওষুধের সন্ধান পাওয়া খুব সহজ নয়। বিশেষ করে আপনি যদি এমন এক সমাজের অংশ হন; যেখানে প্রতিনিয়ত ভুলভাবে উপস্থাপন ও দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। থাকতে হয় একঘরে হয়ে।

কিন্তু এসব কিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যতিক্রমী এক ভালোবাসার গল্প রচনা করেছেন বাংলাদেশি এক সাবেক যৌনকর্মী। শারীরিকভাবে অক্ষম এক ভিক্ষুকের কাছে ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তাদের এই ভালোবাসার গল্প ঝরিয়েছে হাজারও মানুষের চোখের অশ্রু।

চমকপ্রদ এই ভালোবাসার গল্প শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্বাস মিয়া ও সাবেক যৌনকর্মী রাজিয়া বেগমের। তাদের এ গল্প জয় করেছে অনলাইনে হাজার হাজার মানুষের হৃদয়।

বাংলাদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রী জিএমবি আকাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইংরেজিতে লেখা এক পোস্টে এই দম্পতির গল্প জানিয়েছেন। তাদের জীবনের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি।

জিএমবি আকাশ জানিয়েছেন, কীভাবে রাজিয়া বেগমকে বাধ্য করা হয়েছিল পতিতাবৃত্তিতে। অন্ধকার এই জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন একাধিকবার; কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। সহায়তাহীন রাজিয়া বেগম চরম বিরক্তি নিয়ে তার মেয়ে টুম্পার জন্য সহ্য করেছিলেন সব কষ্ট।

তবে প্রতিদিন রাতে কেন তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেন; সেকথা মেয়েকে বলার সাহস পাননি কোনোদিন। রাজিয়া বলেন, ‘আমি কখনোই রাতে কাজ করতে চাইতাম না। ব্যবহার করা ছাড়া কখনোই কারও কাছে কোনো সহায়তা পাননি তিনি।’

কিন্তু বৃষ্টিস্নাত এক রাতে হুইল চেয়ারে বসে থাকা অপরিচিত এক ব্যক্তি কোনো কিছুর বিনিময়ের দাবি ছাড়াই রাজিয়া বেগমকে টাকা দেয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। এ দৃশ্য দেখে হৃদয় ভেঙে কান্না আসে রাজিয়ার।

রাজিয়া বলেন, ‘আমার জীবনে প্রথমবারের মতো ওই সন্ধ্যায় কেউ আমাকে ব্যবহার করা ছাড়াই কিছু দেয়। ওইদিন বাসায় ফিরে প্রচুর কেঁদেছি। সেদিনই প্রথম আমি ভালোবাসা অনুভব করি।’

এ ঘটনার পর অনেক দিন ওই রাস্তায় আব্বাস মিয়াকে খুঁজেছেন তিনি। একদিন একটি গাছের নিচে তাকে দেখতে পান রাজিয়া। তিনি জানতে পান, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে স্ত্রী তাকে ছেড়ে গেছে অনেক আগে। মনে ব্যাপক সাহস সঞ্চয়ের পর আমি তাকে বলি, আমি তাকে আর ভালোবাসতে পারব না। তবে সারাজীবনের জন্য তার হুইল চেয়ার টানতে পারব। ’

মুহূর্তের মধ্যে আব্বাস মিয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আব্বাস বলেন, ‘ভালোবাসা ছাড়া এই হুইল চেয়ার সবাই টানতে পারবে না।’ জীবনের ঘানি টানাটানিতে মিলে যায় দুটি মন। তাদের ভালোবাসার কাছে হেরে যায় জীবনের চরম দুঃখ-দুর্দশা। এই দম্পতি বিবাহিত জীবনের চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে চলতি বছর।

যদিও সবকিছু সহজ ছিল না তাদের, কিন্তু আব্বাস মিয়া তার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। সেই দিন থেকে এখন পর্যন্ত আব্বাস মিয়া তার অজানা গাছের ছায়ায় একবারের জন্য কাঁদতে দেননি রাজিয়াকে।

সূত্র : দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।