শাকিব খানের কাছে পরিচালক রনির স্ত্রীর খোলা চিঠি

মেন্টাল, বসগিরি ও ধ্যাততেরিকি নামের তিনটি ছবি বানিয়ে আলোচনায় আসেন চিত্রপরিচালক শামীম আহমেদ রনি। এর মধ্যে চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তার। এরপর রংবাজ নামের আরেকটি ছবি নির্মাণের সময় রনির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনে চিত্রপরিচালক সমিতি। সেজন্য তিনি নিষিদ্ধ হন।

একই সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে তার স্ত্রী তমা খানের সঙ্গে বৈবাহিক জীবনে কহলে জড়িয়ে পড়েন নির্মাতা রনি। তার স্ত্রী এর আগে অভিযোগ করেন, রনি অন্য মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।

প্রায় কয়েক মাস ধরেই স্ত্রী তমার সঙ্গে থাকেন না রনি। এ নিয়ে তমা খান তার ফেসবুকে শনিবার দুপুরে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে স্ট্যাটাসে আগাগোড়া রনির নাম লেখা থাকলেও এটি তমা শাকিব খানের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন। কারণ রনি শাকিব খানের খুব কাছের মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন তমা।

শাকিব খানের কাছে লেখা তমা খানের খোলা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো…

‘আজকে আমি অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে কিছু কথা ফেসবুকে সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে যাচ্ছি। যদিও আমার ফ্যামিলি থেকে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে, তারা কোনো সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত আমি যেন আমার ব্যক্তিগত বিষয় টিষয়ে ফেসবুকে আর না লিখি। কিন্তু আমার আর চুপ করে থাকার মতো অবস্থা নেই!

এভাবে চুপ করে থাকতে থাকতে আমি হয়তো একদিন স্ট্রোক করে মরে যাব! তাই পরিবারকে ধরতে গেলে অগ্রাহ্য করেই আমি আমার না বলা কথাগুলো ফেসবুকে বলব! কারণ আমিও তো একজন মানুষ। আমারও কিছু মতামত থাকতে পারে, কথা থাকতে পারে। যেগুলো অনেকেরই জানা নেই হয়তো। জানানো উচিত সবাইকে।

যেখানে জীবনটাই আমার সেখানে কথাগুলোও নিশ্চয়ই আমার।
(জানিয়ে রাখা ভালো, আমি কোনো দুধে ধোয়া তুলসীপাতা না অথবা পীরবাবা না কিংবা নায়িকা শাবানাও না!)

যাই হোক আমি এখন কথাগুলো বলব একটা চিঠির মাধ্যমে। এবং চিঠিটা লেখা হবে একজন সুপারস্টারের উদ্দেশ্য… (বিশ্বাস করুন বন্ধুগণ, সস্তা পাবলিসিটি অথবা আলোচনায় আসবার জন্য আমার এই চিঠি লেখা না। আমি অতিসাধারণ একজন মানুষ। আর পাবলিসিটির জন্য অথবা আলোচনায় এসে আমার লাভটাই বা কি? এগুলো পাওয়ার জন্য কিছু করতে হলে অনেক আগেই অনেক কিছুই করতে পারতাম!)

যাই হোক, এখন আসল কথায় আসি। মানে চিঠিটা লেখা শুরু করি। আশা করি খুব শিগগিরই কথাগুলো প্রাপকের কাছে পৌঁছে যাবে।

শ্রদ্ধেয় দুই বাংলার সুপারস্টার, ভীষণ ক্ষমতাবান, অত্যন্ত সফল একজন মানুষ এবং আমার একসময়ের খুব কাছের প্রিয় বড় ভাই শাকিব খান, আমার শুভেচ্ছা নিবেন। পর সমাচার এই যে, আপনার ব্যক্তিগত যে ফোন নম্বরটা আমার ছিল ওটা বন্ধ পাচ্ছি কিছুদিন ধরে। তারপর আপনার খুব কাছের একজন মানুষের কাছে আপনার কন্টাক্ট নম্বর চেয়েছিলাম। সে সম্ভবত ইচ্ছা করেই দেয়নি অথবা সত্যি সত্যি খুঁজে পায়নি!

যাই হোক, এই চিঠিটা আপনাকে লেখার পেছনে কয়েকটা কারণ আছে। হয়তো দু-একটা কারণ আপনি আন্দাজও করতে পারছেন। কিন্তু যে কারণগুলা আপনি আন্দাজ করতে পারছেন না সেগুলো হলো, ‘মেন্টাল’ সিনেমা থেকে শুরু করে ‘রংবাজ’ সিনেমা বানানো পর্যন্ত যে লোকটা (শামীম আহমেদ রনি) দীর্ঘ তিন বছর আপনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে ছিল (এখনও আছে সম্ভবত) তিনি গত চার মাস ধরে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। আমি কোথায় আছি, কীভাবে আছি এটা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।

শুনেছি তিনি নতুন একজন প্রেমিকা জুটিয়েছেন। এবং তার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছেন (যেখানে আমাদের মধ্যে কোনো ডিভোর্স হয় নাই)। সেই প্রেমিকাটিকে নায়িকা বানিয়ে শুনেছি তিনি নতুন সিনেমাও বানাতে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে আবার তার নতুন নায়িকার কিছু স্টিল ছবি-ভিডিও কেউ একজন আমাকে ফেক আইডি থেকে পাঠিয়ে জানিয়েছেন। উনিও নাকি বিবাহিত এবং এই সমস্ত নোংরা জিনিসপত্র মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে ফেক আইডিধারী রীতিমত আমাকে অনুরোধ করেছেন! আমি সেই ফেক আইডিধারীকে জানিয়ে দিয়েছি ‘দুঃখিত’! (এদের কাছে ভালোবাসা ভেঙে যাওয়া মানে ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া। উফফ কি জঘন্য পরিস্থিতি!)

প্রেমিকাটির/নতুন নায়িকাটির লুক এক সময়ের অতি জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ‘ময়ূরী’র নিউ ভার্সন! এগুলা অবশ্য আমার নিজের কথা না…তার(পরিচালকটির) কিছু পাগলটাইপ ফ্যানরা নিয়ম করে আমাকে এসব আপডেট দেয় ইনবক্সে। যদিও এগুলো জানার আমার তেমন কোনোই আগ্রহ নেই!

চিঠি লেখার মূল কারণে ফিরি। বর্তমানে সে (রনি) তার নিজের পরিবারের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখছে না। তার মা-বাবা প্রায় প্রতিদিন আমাকে ফোন দেয়। আমার খোঁজ-খবর নেয়। অনেক কান্নাকাটি করে। আমার নিজের কথা বাদ দিলাম। যেহেতু আপনি (শাকিব খান) আমাকে তার সুবাদেই ‘ছোট বোন’ বলে ডেকেছেন এমনকি ‘তুই’ সম্বোধন করে ডেকেছেন কিছুদিন আগ-পর্যন্তও।

এজন্য তাকে (রনি) দয়া করে আমার হয়ে বলবেন যে ‘আমাকে তার ভালোবাসার দরকার নাই যেহেতু আমি পুরনো হয়ে গেছি, ঠিক আছে! সে তার প্রেমিকা (বউ ও হতে পারে) নিয়ে সুখে থাকুক। কিন্তু সে যেন তার নিজের বাবা-মার একটু খোঁজ-খবর রাখে। তারা তো তাকে জন্ম দিয়েছেন। তারা খুব অসহায়। তারা চায় তাদের একমাত্র ছেলে একজন ভালো মনোরোগ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিক।

সে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক। ‘রনি’ তাদের একমাত্র ছেলেসন্তান। অন্তত এটা তাকে বুঝতে হবে, বোঝা উচিত….!
ছোট বোন হিসেবে আপনার কাছে এটাই আমার প্রথম এবং একমাত্র দাবি।

আর আমি কিন্তু অনেক ভেবে-চিন্তেই আপনার কাছে কথাগুলো বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ বিগত তিন বছরে আমি বুঝে গেছি শুধুমাত্র ‘আপনি’ ছাড়া সে অন্য কারও কথা শুনতে রাজি না, শুনবেও না। কারণ আমি তাকে খুব ভালো করে চিনি!

হাস্যকর হলেও সত্যি, চার মাস আগেও আমার সাথে যখন সে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতো তখন সে আপনার টোনেই এবং আপনার মতো অঙ্গ ভঙ্গি করেই কথা বলত। মনে হত, একজন জ্বলজ্যান্ত ‘শাকিব খান’ আমার সাথে সংসার করছে!

মোট কথা, সে আপনাকে ব্যক্তি মানুষ হিসেবে ‘গুরু’ মানে। এটা আমার গত তিন বছরের অবজারভেশন। বলাবাহুল্য আজ থেকে সাত-আট বছর আগে সে ‘ওয়াহিদ তারেক’ নামক একজন নির্মিতাকেও ‘গুরু’ মানত। সে ছিল সেই নির্মিতার ফাস্ট এডি (সহকারী পরিচালক)। আমার অভিনীত প্রথম টিভিসি ছিল সেই নির্মাতার নির্দেশনায়। তবে তাকে আমি এখনো গুরু মানি, অনেক শ্রদ্ধা করি। আমার প্রথম শিক্ষক বলে কথা!

যাইহোক, ওই সময়টায় আবার এই মানুষটাই কিন্তু ‘ওয়াহিদ তারেক’ কে অনুকরণ করত। আমি খুব হাসতাম তখন এগুলো দেখে। এখন মনে হয়, ওই সময়টাই ছিল আমার স্বর্ণযুগ।

অনেক বাড়তি আলাপ করে ফেললাম বড়ভাই! আপনার হয়তো এত বড় চিঠি পড়ার সময় নেই। কেউ হয়তো আপনাকে পড়ে শোনাবে জানি!

সরি তাহলে আরেকটু বাড়তি কথা তবে বলেই ফেলি। আপনার কি মনে পরে বড়ভাই, রাত দুইটার দিকে একদিন ফোনে আপনাকে খুব করে ঝেড়েছিলাম একটা বিশেষ কারণে। এইজন্য আপনি পরদিন আমাকে ‘দজ্জাল’ বলেছিলেন।

রনির কাছে অবশ্য পরে শুনেছি! আমি কিন্তু ওসব কিছুটা মজা করেও বলেছিলাম! আমি আসলে তখন বুঝিনি আপনার সঙ্গে ওইভাবে কথা বলার রাইট আসলে কারোই নাই। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন আমাকে। আর এখানেই চিঠির ইতি টানবো।

একজন সুপারস্টার হিসেবে এমন সম্মান নিয়েই বেঁচে থাকুন, ব্যক্তিজীবনেও সাফল্য ও সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকুন। সেইসাথে অনেক অনেক শুভকামনা রইল। (আপনার ব্যক্তিজীবন নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছা নাই কারন ওটা আপনার ব্যক্তিজীবন! যদিও এর আগে অনেক কিছুই বলে ফেলেছি.. তবে সুপারস্টার হিসেবে)।

বিনীত আপনার একসময়কার ছোট বোন ‘তমা’

বি.দ্র. আশা করছি কথাগুলা লিখিতভাবে নিষিদ্ধ কিন্তু তলে তলে ‘রংবাজ’ সিনেমার পুরো কাজ চালিয়ে যাওয়া পরিচালক ‘শামীম আহমেদ রনি’ কে বুঝিয়ে বলবেন। কারণ আপনি নিজেই যেহেতু ‘রংবাজ’ সিনেমার প্রযোজক ( রনির মুখে শুনেছি) সেই হিসেবে ধরে নিচ্ছি আপনারা এখন একসঙ্গে কলকাতায় আছেন। তার (রনির) বাবা-মায়ের কান্না আমি আর নিতে পারছিনা। আমাকে তারা কি সান্তনা দেবেন? উল্টো আমিই তাদের সান্তনা দিয়ে পেড়ে উঠতে পারছিনা। বিশ্বাস করেন বড় ভাই!!