শাশুড়িকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিলেন পুত্রবধূ

মা ক্যান্সার আক্রান্ত। বাবা ভুগছেন কিডনির সমস্যায়। পরিস্থিতি প্রতিকূল বললেও কম বলা হয়। এই অবস্থায় বাবা-মায়ের চিকিৎসা দূর-অস্ত, তাদের পেটালেন ছেলে-বৌমা। বৃদ্ধা মাকে খুন্তি দিয়ে মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন গুণধর পুত্রবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটের সাহাপুর গ্রামে।

বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অভিযোগ জানিয়েছেন থানায়। অবস্থা এমনটা ছিল না। ছেলের বিরুদ্ধে থানায় যেতে হবে ভাবেননি বাসুদেব মণ্ডল। বরং আশা ছিল বড় হয়ে ছেলে উত্তম মোছাবে সংসারের মলিনতা। একটা সময় স্ত্রী প্রতিমাকে বাসুদেব আধপেটা খেয়ে বলতেন, “উত্তমকে খাইয়েছো তো ঠিক করে? দেখে নিও আমাদের খোকা একদিন মস্ত বড় হবে। যত বড় হলে মানুষ আকাশ ছুঁতে পারে।”

প্রতিমা কত দুপুর নিজে জল খেয়ে উত্তমের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। বুকে আগলে রেখে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছেন। প্রস্রাব করে ভিজিয়ে দিলে, সেই ভেজা বিছানায় শুয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুম পাড়িয়েছেন। সেই খোকা যে বিয়ের পর পালটে যাবে ভাবা যায়নি।

কোলাঘাটের এক কোল্ডস্টোরেজে অপারেটরের কাজ করতেন বাসুদেববাবু। ঘরে এক ছটাকও ধান জমি নেই। অল্প বেতনের ওই কাজ করে বড় ছেলে উত্তমকে পলিটেকনিক পড়িয়েছেন। ছোটো ছেলে তরুণকে বিএ পাশ করিয়েছেন। মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন।

বাবা-মায়ের দায়িত্ব, কর্তব্যে অবহেলা ছিল না এতটুকু। আশা ছিল জীবন দিয়ে যে সন্তানদের মানুষ করেছেন, তারা দুখ মোছাবে। হাল ফেরাবে সংসারের। আর ১৯৯৯ সালে যখন শিক্ষকতার চাকরি পেল উত্তম, তখন বাসুদেব-প্রতিমা মেতেছিলেন বাঁধভাঙা উচ্ছাসে। ভেবেছিলেন, এবার এল সুখের দিন।

ভুল ভাঙল ২০০৪ সালে। বিয়ে করার পর বাবাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় উত্তম। কথাগুলো বলার সময় গলা কেঁপে ওঠে বাসুদেববাবুর। এরপরই শুরু হয় অত্যাচার। তখন বৃদ্ধ দম্পতি ছোটো ছেলে তরুণের কাছে থাকতে শুরু করেন। তরুণ হাওড়ার এক কারখানার ঠিকা শ্রমিক। এরই মাঝে ২০১২ সালে প্রতিমাদেবী ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

বিপুল অর্থব্যয়ে তার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলার সময় বাসুদেববাবু কিডনির রোগে আক্রান্ত হন। অর্থসংকটে পড়ে শিক্ষক ছেলের কাছে টাকা চান তিনি। টাকা দেননি ছেলে। সেই ধাক্কা আর সহ্য করতে পারেননি দম্পতি। উচিত শিক্ষা দিতে মামলা করেন ছেলের নামে। যা এখনও আদালতে বিচারাধীন।

এই সময় থেকেই চরমে পৌঁছয় তিক্ততা। গতকাল দুপুরে প্রতিমাদেবী বাথরুমে গিয়েছিলেন। তারপাশেই টিউবওয়েলে থালা বাসন ধোয়ার কাজ করছিলেন বৌমা শ্রাবণীদেবী। বাথরুমে জল দেওয়ার সময় কিছুটা জল ছিটকে ধোয়া বাসনে এসে পড়ায় আবার ঝামেলা শুরু হয়।

এই নিয়ে কথাকাটাকাটি চলার সময় কড়া ও খুন্তি নিয়ে শ্রাবণীদেবী শাশুড়িকে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। স্ত্রীকে বাঁচাতে দৌড়ে আসেন বাসুদেববাবু। তিনিও বৌমার হাতে মার খান বলে অভিযোগ। এই সময় উত্তম ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করে বলে অভিযোগ।

বাসুদেববাবু কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সারা জীবন এক কাপড়ে থেকেছি। নিজে না খেয়ে ছেলে ও মেয়েকে ভালো জায়গায় পড়িয়েছি। এখন বোধহয় তার প্রতিদান পাচ্ছি। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ থানায় ছেলে ও বৌমার নামে অভিযোগ জানিয়েছি।”

অভিযুক্ত ছেলে উত্তম মণ্ডল বলেন, “বিয়ের পর থেকে মা ও বাবা আমার স্ত্রীর উপর চরম অত্যাচার করত। ওরাই আমাদের আলাদা করে দেয়। আমি ধার করে মায়ের ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করিয়েছি। উলটে এখন আমার নামে কোর্টে কেস করেছে। গতকাল আমার স্ত্রীকে মা মারধর করেছে। আমারাও থানায় অভিযোগ করেছি।”