‘শেখ হাসিনা থাকতে আলেমদের কোনো ক্ষতি হবে না’

প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, যতদিন শেখ হাসিনা আছেন তখন এদেশের আলেমদের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়ে তিনি সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন।

রবিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘শুকরিয়া মাহফিলে’ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নে তিনি নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে শুকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত রয়েছেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি একজন সামান্য সমন্বয়ক হিসেবে এই মাহফিলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আপনারা যারা কষ্ট করে এখানে এসেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

‘১৪ হাজার ৩৮টি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১৩ লাখ ৪২২ জন। এখান থেকে পাস করে লাখ রাখ আলেম দ্বীনই খেদমত করছেন। দুর্ভাগ্যজনক, দুঃখজনক ১৯৭৭ সালে অন্যায়ভাবে এই কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপরে আমাদের আলেম-উলামারা বহুবিধ সমস্যার সম্মুখিন হয়েছেন। সনদের স্বীকৃতি না থাকায় চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটা কওমি শিক্ষার প্রতি দীনই এলেমের প্রতি অবমাননার শামিল।’

সামরিক সচিব বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে কওমি শিক্ষাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কওমি মাদ্রাসায় হামলা করা হয়। ২০০৬ সালে ইমাম-মোয়াজ্জেন হিসেবে নিয়োগ পাবে এই মর্মে আদেশ জারি করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি।’

‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আলেম-উলামার প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক। তাই ২০১৯ সালে সরকার গঠন করার পরে কওমি মাদ্রাসার শীর্ষস্থানীয় আলেমদের তার বাসভবনে দাওয়াত দেন। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের হারানো সম্মানকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এজন্য যা যা করণীয় তাই করার নির্দেশ দেন।’

‘দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী এটার স্বীকৃতি দেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটা প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রধানমন্ত্রী শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করে থেমে থাকেনি এটাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন নেন এবং জাতীয় সংসদে আইন হিসেবে পাস করেন। কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা বজায় রেখে এই আইন পাস করা হয়। এই সনদের স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া অভূতপূর্ব, অকল্পনীয়।’

‘কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস হবে এটা শুনে দেওবন্দের সম্মানিত মুহতামীম সাহেব বলেছিলেন, ‘অ্যা বিলকুল না মুমকিন হ্যায়’, এই না মুমকিনকে মুমকিন করার একজনই আছেন, তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রীর ইসলাম ও দীনের প্রতি শ্রেষ্ঠতম খেদমত। এর মাধ্যমে শুধু কওমি আলেমদের নয় তামাম জাহানের আলেমদের সম্মানিত করেছেন।’

কওমি আলেমদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা জনৈক মাওলানা কর্তৃক একজন নবীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের বিষয়ে তার বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। যারা আমাদের প্রিয় নবী ও সব আম্বিয়া ও সাহাবা কেরামদের বিষয়ে ভুল আকিদা পোষণ করে তারা যে মাছুম স্বীকার করে না তাদের এই দোসরদের আপনারা কী করবেন? যারা কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি বাতিল করে দিয়েছিল, যারা কওমি শিক্ষাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়, তাদের দোসর ও সহযোগীদের ক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন?

আলেমদের প্রতি আর্জি রেখে তিনি বলেন, হে উলামায়ে দেওবন্দ বিভক্ত হবেন না। আপনারা একত্রিত থাকেন, ঐক্যবদ্ধ থাকেন।

সামরিক সচিব বলেন, ‘৫ মে সম্পর্কে অনেক মিথ্যাচার করা হয়েছে, বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল আলেম-উলামা এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোনো রকম ক্ষতি না হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই নির্দেশনা মাথায় রেখে ধৈর্য ও পেশাদারিত্বের সাথে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। কেউ আজ পর্যন্ত হতাহতের সঠিক তালিক দিতে পারেনি। যাদের নাম বলা হয়েছিল আমরা তদন্ত করে দেখেছি উনি বেঁচে আছেন, মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছে। সকল অপপ্রচার ভুল ও মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আপনারা এ মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না। যারা এ মিথ্যাচার ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’