শেরপুর সীমান্তে হাতির উপদ্রব, নির্ঘুম রাত কাটছে কৃষকদের

দেশের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের গারো পাহাড়ের গ্রামগুলোতে আবারও হাতির উপদ্রব শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতি রাতেই আমন ফসলের খেতে হামলা করছে বন্যহাতি। এতে অতিষ্ঠ পাহাড়ি এলাকার মানুষ। গ্রামবাসী ও কৃষকরা তাদের জানমাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। বন্যহাতি ও ফসল রক্ষায় সরকারিভাবে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, প্রায় ৪০-৫০টির মতো বন্যহাতির পাল খাবারের সন্ধানে আধাপাকা আমন ধানখেতে হানা দিচ্ছে। এতে আমন ধানখেতের আধাপাকা ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করছে। ফসল রক্ষায় কৃষকরা রাতে মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল বাজিয়ে, টিন পিটিয়ে ও হৈ-হুল্লোর করে ধানখেত পাহারা দিচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ধরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে বন্য হাতির পাল বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এসব হাতি খাবারের খোঁজে শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় বিচরণ করে। সর্বশেষ গত দেড় মাস ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি গ্রাম দাওধারা কাটাবাড়ি ও নাকুগাঁও এলাকায় অবস্থান করছে ৪০-৫০টি বন্যহাতি। এসব হাতি এক সময় রাতের বেলায় খাবারের সন্ধানে ফসলি জমিতে নেমে পড়ত।

কিন্তু এখন সম্প্রতি দিনের বেলাতেই ফসলের জমিতে হামলে পড়ছে। এ হাতির পাল মাঝেমধ্যেই গহিন অরণ্য থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরের লোকালয়ে চলে আসছে। বিশেষ করে এক সপ্তাহ ধরে দাওধারা কাটাবাড়ি ও নাকুগাঁও গ্রামের ফসলি জমিতে নেমে পড়ছে হাতির পাল। এ সময় ফসল বাঁচাতে জমির পাশেই অবস্থান নিচ্ছেন কৃষক। আবার রাত জেগে পাহারা দেন তারা।

গত কয়েকদিনে পাহাড়ি এলাকার কৃষকদের প্রায় ২০ একর জমির আমন ধানখেত খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করে দিয়েছে হাতি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, প্রায় অর্ধশতাধিক বন্যহাতির একটি পাল খাবারের সন্ধানে পাহাড়ি গ্রামের ৩০-৩৫ কৃষকের আমনের খেত ও সামাজিক বনায়নের চারাগাছ নষ্ট করেছে।

সংশ্লিষ্ট পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, প্রতিবছর বন্যহাতির পাল খাবারের খোঁজে লোকালয়ে এসে ফসল নষ্টের পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। এই হাতিগুলো তাড়ানোর জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ ও কৃষকরা হাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটান। এর একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বন্যহাতির পালটি দিনে উপজেলার পাহাড়ি এলাকার গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছে। আর সন্ধ্যা হলেই খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে। আমরা বন্যহাতি ও ফসল রক্ষায় তৎপর রয়েছি।