ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে অনাস্থার হুমকি অ্যাটর্নির

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়া সংক্রান্ত সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় নিয়ে করা আপিলের শুনানিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করার হুমকি দিয়েছেন। যদিও পরে আবার এই মামলায় আপিল শুনানি করেন তিনি।

মঙ্গলবার দ্বিতীয়দিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগে শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ হুমকি দেন। পরে মামলার মামলার কার্যক্রম আগামী ২১ মে পযন্ত মূলতবি করেন আদালত।

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের বিষয়টি জাতীয় সংসদের হাতে নাকি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে থাকা উচিত তা নির্ধারণ হওয়া দরকার।

এর প্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনি তো আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত আছেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, এ মামলার সঙ্গে বিচারকদের শৃংখলার বিষয়টি জড়িত। এক্ষেত্রে কোনো শূন্যতা থাকতে পারে না।

এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আপিল বিভাগে এখন বিচারপতির সংখ্যা সাতজন। কিন্তু শুনছেন ৫ জন। এভাবে বিচার চললে আমি অনাস্থা দিতে বাধ্য হবো।

‘আপনারা বলেছেন যে- সবাই শুনবেন। আজ তা শুনছেন না। সাতজনকে শুনতে বলায় ভুল কোথায়?,’ বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি আদালতকে খাটো করে (আন্ডার মাইন্ড) দেখছেন। এর উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তা করছি না। আমাদের আবেদন, হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করা হয়েছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বৈরী কিছু থাকলে সেটা আমরা দেখবো।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায়ে অনেক কথা আছে।’ এরপর বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, এখনও তো মামলা শুনলামই না।

এর প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি শুনানি বিলম্ব করছেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের আরেকটি আবেদন আছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই বিচার বিভাগ (হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে্) এভাবে কথা বলতে পারে না। আমি অসহায়। এভাবে শুনানি অব্যাহত রাখলে ন্যায়বিচার হবে না। শুনানিতে অংশ নিতে আমাকে বাধ্য করবেন না।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি আদালতকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন যে, আপনি নিজেই বিপদে পড়বেন।’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? গতকাল (সোমবার) বলেছেন সবাই শুনবেন। কিন্তু তাতো দেখছি না। আমরা তো আদালতকে সহযোগিতা করতে চাই।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় উপস্থাপন করতে সমস্যা কোথায়? আপনি লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করুন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনি বলেছিলেন যে, সাতজনই শুনবেন। কিন্তু এখন তা শুনছেন না। আমি তো বলেছি মে মাসেই শুনানি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এভাবে হলে তো আমি এ মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবো।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি পীড়াপীড়ি করছেন কেন?’

এরপরও প্রধান বিচারপতি রায় উপস্থাপন করতে বললে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায় উপস্থাপন করবো। তবে আমাকে সময় দিতে হবে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা আগে বলেছিলাম লিখিত যুক্তিতর্ক প্রস্তুত করে তা দাখিল করতে। আপনার দফতরে ১৫৫ জন আইন কর্মকর্তা আছেন। তাই এটা প্রস্তুত করতে এতো সময় লাগবে কেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছি। এই সময় দিলে আকাশ ভেঙে পড়বে না। আশা করছি এ সময়ের মধ্যে উনারা (বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ) ফিরে আসবেন।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি হাইকোর্টে শুনানি করেছেন। আপনার সব মনে থাকার কথা।’

অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, আপনি আদালতের প্রধান আইন কর্মকর্তা। তাই মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলা ঠিক হয়নি।

এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি নিরুপায় হয়ে বলেছি। আপনারা যখন ৫ জন শুনবেন বলেছেন তখন এটা বলেছি। ’

এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা পেপার বুক থেকে পড়া শুরু করেন। তার বক্তব্য উপস্থাপন শেষ হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘গতকাল (৮ মে) সোমবার সিনিয়র আইনজীবী টিএইচ খান উপস্থিত ছিলেন। আজ (মঙ্গলবার) ড. কামাল হোসেন, এমআই ফারুকী আছেন।’

এ পর্যায়ে ড. কামাল হোসেন দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করেছি।’ এ সময় ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ড. আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে লিখিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আশা করি বাকি যারা আছেন তারাও দাখিল করবেন। এরপর প্রধান বিচারপতি আগামী (১৪মে) পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনারা ন্যায়বিচারের স্বার্থে অপরাপর সকল মামলায় সবপক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। এ মামলায় সেটা করছেন না কেন? দুই সপ্তাহ সময় দেয়ার আবেদন করছি।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এখানে বিচারকদের শৃংখলার বিষয়টি জড়িত। সুপ্রিম কোর্ট এই সংবিধানের অভিভাবক। আমাদের একদিকে যেতে হবে।’

এরপর আগামী ২১ মে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুনানি মূলতবি করেন আদালত।

এর প্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘করজোড়ে বলছি, সবাইকে নিয়ে শুনানি করুন।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে শুনতে হবে এমন শর্ত দেয়া যায় না। একজন বিচারপতি অসুস্থ থাকতে পারেন। একজন বিদেশে থাকতে পারেন। একজন তো জুলাইয়ে অবসরে যাবেন। কেউ জুলাই পর্যন্ত অসুস্থ থাকতে পারেন। সব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই প্রধান বিচারপতিকে আদালত চালাতে হয়।’