সচিবদের সঙ্গে বসছেন প্রধানমন্ত্রী, নির্দেশনা দেবেন ৮ বিষয়ে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খাবারের অভাব এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে শুধু দুর্ভিক্ষই হবে তা নয়, এর জেরে দেশে দেশে বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে এমন আশঙ্কা বিশ্ব খাদ্য সংস্থার। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার কৃচ্ছতা সাধনের উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দেশের এক ইঞ্জি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সে বিষয়ে বার বার গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রায় প্রত্যেকটি সভায় সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলছেন। এবার সংকট মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে সচিবদের সাথে বসছেন সরকার প্রধান।

মন্ত্রিপরিষদ সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পুরো পৃথিবীতেই মন্দা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও মন্দার প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং আসন্ন সব ধরনের সংকট মোকাবেলায় সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৭ নভেম্বর রোববার প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি সচিবদের সঙ্গে সভা করে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছর ১৮ আগস্ট সর্বশেষ সচিবসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষেই দুপুর ১ টায় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত রাখা, জ্বালানি সংকট মোকাবেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রশাসনিক নানা বিষয়েও আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী ও সচিবরা।

সূত্র জানায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরা, প্রয়োজনীয়তার নিরিখে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরা, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারের যোগান নিশ্চিতকরা এবং পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা, সরকারি কাজে আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ করা, সরকারি সেবা প্রদানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক পরিকল্পনা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বিষয় সচিব সভার সম্ভাব্য আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের সার্বিক বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশাসনের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাও প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরবেন সচিবরা।

দেশে বিদুৎ সংকট চরমে পৌঁছেছে। আগামী মাস থেকে সংকট দূর হবে বলে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। সচিব সভায় বিদুৎ ও জ্বালানির বিষয়ে জোরালো আলোচনা হবে।

দেশের রিজার্ভ বর্তমানে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। ডলার সংকটেও পড়েছে দেশ। ডলারের অভাবে বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও আমদানি নিরুৎসাহী করতে ১৩০টি পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। ডলার সংকটসহ দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক দুর্বলাবস্থা কাটাতে সরকারের কি কি করণীয় তা নিয়ে সচিবদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিতে সরকার প্রধান কর্মকর্তাদের বারবার অনুরোধ করছেন। অতি প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কিভাবে স্বচ্ছতা রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সচিব সভায় দিক-নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কোন কোন মন্ত্রণালয়-বিভাগ বর্তমানে কি কি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তার বিস্তারিত জানতে চাইবেন শেখ হাসিনা। প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তা আলোচনা করবেন তিনি। সরকারি কাজে আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ করার উপরও সরকার প্রধানের কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও সচিব সভায় সরকারি সেবা প্রদানে কিভাবে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে। ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বিষয়ে পর্যালোচনা হবে সচিব সভায়। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সচিব সভায় নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হবে তা নিয়েও আলোচনা করবেন সচিবরা।