সরকারের কৌশল তছনছ করে দিতে হবে : মির্জা ফখরুল

সরকারের কৌশল তছনছ করতে সক্ষম না হলে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও সাজা দিয়ে তাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাইছে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।

মির্জা ফখরুল বলেন,‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। সব মামলাকে শেষ পর্যায়ে নিয়ে সাজা দিতে চায়। মামলা দিয়েই তারা খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে।

বিএনপির এই মহাসচিব আরও বলেন, এই সরকার মানুষকে ভয় পায়। তাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারেক রহমানকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। সেজন্য তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। এই সরকার সম্পূর্ণরূপে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। এজন্য ক্ষমতায় টিকে থাকতে অপকৌশল নিতে হচ্ছে। এজন্য মামলার অপকৌশল নিয়েছে তারা।

ফখরুল মনে করেন, সরকার খালেদা জিয়ার মামলা শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারেক রহমান নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেলেও হাইকোর্ট থেকে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির এমন কোনও নেতা নেই যার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা নেই।

ফখরুলের ভাষ্য, বিএনপির প্রয়াত নেতা এম কে আনোয়ার চলে গেলেন শুধু মামলার কারণে। শেষ পর্যায়ে এসে তাকে এমন মামলা দিলো যে তিনি নিতে পারলেন না।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

সরকারকে পজিটিভ রাজনীতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি রাস্তা বের করুন, যাতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়। যাতে মানুষ ভোট দিতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে,পায়ের নিচে মাটি নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে চায়। কিন্তু এই দেশের ইতিহাস আছে, যাদের ওপর ভর করে ক্ষমতা চালাচ্ছেন, জনগণ জেগে উঠলে,সময় এলে এরাও পাশে থাকবে না।

ফখরুল আহ্বান জানান, যা হয়েছে সেই নেতিবাচক বিষয় বাদ দিয়ে আসুন পজিটিভ রাজনীতি করুন। দেশের মানুষের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিন। আমরা বলি না বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন।

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যে সংলাপ করছে এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অবাধ নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কী না-তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল দাবি করেন, ‘ইসি দুই মাস ধরে যে সংলাপ করেছে সেটি হচ্ছে লোক দেখানো আইওয়াশ। সংলাপে অংশ নেওয়া সবাই বলেছে যে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন জাতি তাকিয়ে আছে ইসি কী করে তা দেখার জন্য?’

ফখরুলের ভাষ্য, ‘ইসি কিছুই করতে পারবে না। কারণ,সরকারের বাইরে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করার শক্তি নেই। এরপরও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে কিনা,যাতে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে।

সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা, সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বলে আর মেগা প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে মেগা চুরি। হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট করবে আর হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেবে। এই যে উড়াল সেতু কিছুদিন পরে দেখবেন তা ভাঙতে শুরু করেছে। রাস্থাঘাটে চলাফেরা করা যায় না এতো খারাপ অবস্থা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বাজারে এমন কোনও সবজি নেই, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে আছে। গ্যাস, পানি বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছেন। জনগণের পকেট খালি করছেন আর নিজেদের পকেট ভরছেন। ইতিহাস বলে, মানুষ দীর্ঘদিন এসব সহ্য করবে না। তখন কামান দিয়ে কিছু হবে না।

নগর বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহ-সভাপতি ইউনুস মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পটু, রফিকুল ইসলাম রাসেল, তানভীর আহমেদ রবিন, শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ।