‘সরকার একটি এতিম জেনারেশন তৈরি করতে চায়’

আওয়ামী লীগ সরকার দেশে একটি এতিম জেনারেশন তৈরি করতে চায় মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বেআইনী হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকার তাদের টিকে থাকার সমাধান খুঁজছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে একটি বেআইনী হত্যা আরও অনেক হত্যার বিস্তৃতি ঘটায়।

রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কানামাছি না খেলে অবিলম্বে ঈদের আগেই মুক্তির জোর দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, অন্যথায় বাংলাদেশের জনগণ খালেদা জিয়ার ওপর যে জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে তার জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন: ‘জাল নথি’র ওপর ভিত্তি করে সাজানো মিথ্যা মামলায় সরকারের নির্দেশে নিম্ন আদালত কর্তৃক সাজা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করা হয়েছে, সরকারি বহু টালবাহানার পর সে মামলায় খালেদা জিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও সরকারি কারসাজিতে খালেদা জিয়ার জামিন আটকে দেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট কোন মামলায় জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ কারও জামিন স্থগিত করে এমন নজির বাংলাদেশে আর একটিও নেই। মামলাগুলো নিম্ন আদালতেই জামিনযোগ্য, অথচ এতে প্রমাণিত হয় সরকার সকল স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে নিজের কব্জায় রেখেছে। আদালতের শরীর থেকে ন্যায়বিচারের আত্মা উধাও করে এটিকে একটি শূন্য কাঠামোতে পরিণত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সরকার।’

বিএনপির এ নেতা আরো বলেন: ‘আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাক্ত কারাগার যা এখন ভাঙ্গাচোরা স্থাপনা, সেখানে বন্দী করে রাখা খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে প্রচন্ড অসুস্থ। দুই’শ বছরের পুরনো একটি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বেগম জিয়া আটক রয়েছেন, ফলে নানা রোগ তাকে আক্রান্ত করছে। ভোটারশূন্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতেই বেগম জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে-অন্য কোন কারণে নয়, জনগণ কেবল একটি ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচনী তামাশা দেখার অপেক্ষা করছে।

‘অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের পূর্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় বাংলাদেশের জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে তার জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।’

মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদেরের ‘‘এ ধরনের মহৎ অভিযানে দু একটি ভুল হতেই পারে।’’ এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ভুল! ওবায়দুল কাদের সাহেবের এমন বক্তব্য মানবাধিকারকে ঠাট্টা করা। খুনী-সন্ত্রাসীদের ন্যায় বেআইনী হত্যাকে স্বীকৃতি দেয়া।

‘কাউন্সিলর একরাম হত্যার অডিও শুনে, তার স্ত্রী ও মেয়েদের কান্না শুনে শুধু বাংলাদেশের মানুষের বিবেকই নয়, বিশ্ব বিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু একরাম হত্যাই নয় এখন পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযানের নামে প্রায় ১৩০ জনকে বিচারবহির্ভতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত ৪ মাসে ২৫০ জন মানুষকে বিচার বর্হির্ভূতভাবে হত্যা করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যাদের বেশিরভাগই আবার তরুণ যুবক। তারা কে কতটুকু অপরাধের সাথে জড়িত সে সম্পর্কে জনগণকে অন্ধকারে রেখে বিনা বিচারে হত্যার পেছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।’

তিনি বলেন: ‘মাদকের বিস্তার ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের সহায়তাকারী হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তাদের এ সাড়ে নয় বছরে মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। প্রতিবেশী দেশ যথা ভারত থেকে ফেনসিডিল ও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আমদানিতে মদদ দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।

এসময় সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান রিজভী।