সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সেই অবুঝ শিশুর দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

হাজারো মানুষের ভিড়ে মায়ের মুখ খুঁজে ফিরছে চার মাস বয়সী অবুঝ শিশু মারিয়া সুলতানা। ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছে সবার মুখ। মাঝে মাঝে ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে। নিষ্পাপ অবুঝ শিশু মারিয়া কী বুঝতে পারছে তার মা-বাবা, ভাই-বোন আর এ পৃথিবীতে নেই! অন্য মুখে সে খুঁজে ফিরছে প্রিয়জনের মুখ। হাজারো মানুষের ভিড়ে মারিয়া আর খুঁজে পাবে না প্রিয় মা-বাবা, ভাই-বোনের কোল। অবুঝ শিশুর কে দিবে সান্ত্বনা! কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে এখন শোকের মাতম। পুরো গ্রামে নেমে এসেছে পাথরের নীরবতা।
মাছের ঘের ব্যবসায়ী মোঃ শাহীনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন(৩০), ১০ বছরের শিশুপুত্র সিয়াম হোসেন মাহী ও ৭ বছরের শিশু কন্যা তাসমিন সুলতানাকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ভোররাতে কোন একসময় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।

ঘাতকরা এসময় ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে ফেলে রেখে যায়। নিহত শাহীনুরের মা শাহিদা খাতুন(৬০) আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। শাহীনুরের তিন ভাইয়ের একভাই আশরাফুল মালয়েশিয়া থাকেন। অপরজন রায়হানুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী।

তাদের বোন আছিয়া খাতুন বার বার ডুকরে আহাজারি করছেন আর চিৎকার করে বলছেন- আমার মা ও আরেটা ভাই এখানে থাকলে, তাদেরকেও খুন করতো সন্ত্রাসীরা।

এদিকে, মা-বাবা ও ভাই-বোন হারা ৪ মাস বয়সী অবুঝ শিশু মারিয়া সুলতানার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। তিনি শিশু মারিয়া সুলতানাকে হেলাতলা ইউপির ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য নাসিমা খাতুনের জিম্মায় রেখেছেন। এখন থেকে তার চিকিৎসা এবং জীবন গড়ার যাবতীয় দায়িত্ব জেলা প্রশাসক গ্রহন করেছেন বলে ঘটনাস্থলে যেয়ে তিনি ঘোষণা দেন।

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, কলারোয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের জীবিত একমাত্র চার মাসের কন্যাশিশুর দায়িত্ব নিয়ে আপাতত দেখাশোনার জন্য স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে রাখা হয়েছে। তাকে সাময়িকভাবে দেখভাল করতে অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে অভিভাবকরা দাবি করলে আইনানুগভাবে সমাধান করা হবে।

সেসময় কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী জেরিন কান্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আক্তার হোসেন, হেলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ইউএনও মৌসুমী জেরিন কান্তা জানান, ‘কলারোয়ায় সপরিবারে নিহত পরিবারটির একমাত্র জীবিত শিশু কন্যা মারিয়ার দায়িত্ব গ্রহন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন পরিবারটির এবং মারিয়ার পাশে আছে। বর্তমানে শিশুটি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বারের জিম্মায় আছে। সেখানে বাচ্চাটির জন্য দুধসহ কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বাচ্চাটির সহায় হোন।’