সাতক্ষীরার ২ স্কুল শিক্ষকের পরকীয়া প্রেম, নানা সমালোচনা

এক জনপ্রতিনিধির জোরে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করা শিক্ষক আখতারুজ্জামান বেলালের পরকীয়া প্রেমের ছবি ফাঁস, শিক্ষকদের নিয়ে সমালোচনা চলছে। এতে শিক্ষকের মত মহান পেশার মানুষদের সম্মানহানীর পাশাপাশি পেশা কে নিয়ে শুনতে হচ্ছে বিভিন্ন কটু কথা। যারা সমাজের আলোর পথ দেখান, সেই সমাজের মানুষের এমন কাজে রীতিমত অপমানের পাত্র হতে হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে বিষয়টি নিয়ে দ্রুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখে গেছে, অন্তরঙ্গ ছবিতে যে দুইজনকে দেখা যাচ্ছে তাদের একজন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ইন্দিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক। আর অপরজন চুপড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন।

আরো জানা গেছে, কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য প্রদান করে চুপড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জামিলা খাতুনের স্থলে রাজিয়া সুলতানা রোজী পদায়ন হন। ওই সহকারী শিক্ষিকার পিতার বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলায়। বিয়ের সুবাধে তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়ার মুরারিকাঠি গ্রামের গৃহবধু হন। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার শিক্ষক হিসাবে ২০১৭ সালে সাতক্ষীরা পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণে আসেন রোজী। আর সেখানে সদর উপজেলার শিক্ষক বেলাল এই প্রশিক্ষণের অংশ নেন। এ থেকে পরিচয় হয় তাদের।

সেখান থেকে তাদের অবৈধ প্রেমের সুত্রপাত ঘটে। বিষয়টি জানা জানি হলে রোজীর স্বামীর সাথে মনোমালিন্য, পরে হয় বিচ্ছেদ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আখতারুজ্জামান বেলাল বিভিন্ন সময় তাকে সাথে ঘুরে বেড়ান ও অন্তরঙ্গ ছবি তোলেন বলেও জানা গেছে। সাম্প্রতিক তাদের এই প্রেমের বিষয়টি ম্যাগাজিন ভিত্তিক মাসিক নির্ভীক সংবাদ পত্রিকার ২৮ পৃষ্ঠায় “প্রধান শিক্ষক বেল্লাল ও শিক্ষিকা রোজীর পরকীয়া প্রেম সাতক্ষীরার দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত” শিরোনামে ছবিসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় চলছে সমালোচনার ঝড়। এতে এই দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা।

এছাড়া অভিযোগ আছে যে বিভিন্ন সময় কাজের কথা বলে অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন তারা। এমনকি রাজিয়া সুলতানা রোজীর বদলির ক্ষেত্রে মানা হয়নি সরকারি বদলির বিধি-বিধান। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত শিক্ষক তাঁর স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানায় বদলি হতে পারবেন। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত শিক্ষক পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে স্বামীর ঠিকানায় বদলি হতে ইচ্ছে পোষণ করলে কাবিননামা বা প্রত্যয়নসহ লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে পদশূন্য থাকা সাপেক্ষে বদলি হতে পারবেন। কিন্তু বদলির ক্ষেত্রে নিজের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সাপেক্ষে এবং স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র, স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার জমির দলিল ও খতিয়ান, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদসহ আবেদন করতে হবে। কিন্তু সাতক্ষীরার সদর উপজেলায় বদলি হয়ে আসার জন্য কোন শর্তাবলি পূরণ করেননি রোজী।

জানা যায়, সে সময়ের এক জনপ্রতিনিধির প্রভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কর্মকর্তাদের চাপে রেখে বদলির আদেশ করান। পরবর্তী সময়ে উপযুক্ত কাগজপত্র প্রদর্শন করবেন বলেও তা জমা দেননি। তাছাড়া বিধি মোতাবেক রাজিয়া সুলতানা রোজীর বাবার বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলায় এবং পূর্বে স্বামীর বাড়ি কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি গ্রামে হওয়ায় সদর উপজেলায় বদলি হয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

কিন্তু আখতারুজ্জামান বেলাল প্রভাব খাটিয়ে রাজিয়া সুলতানা রোজীকে সাতক্ষীরার সদর উপজেলায় বদলি করিয়ে নিয়ে আসেন। এতে তার সুবিধা বেড়ে যায়। এসব বিষয় নিয়ে আখতারুজ্জামান বেলালের পরিবারে বহুবার ঝগড়া সহ নানা সমস্যা চলে আসছে। কিন্তু আখতারুজ্জামান বেলালের কয়েকজন রাজনৈতিক উচ্চ পদস্থ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা থাকায় কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না তিনি। বরং শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উপর সর্বদা প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক অনিয়ম করে চলেছেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক আখতারুজ্জামান বেলালের কাছে জানতে চাইলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি সম্প্রতি রাজিয়া সুলতানা রোজীকে বিয়ে করেছি।

এদিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল গনি জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যা শিক্ষক সমাজের জন্য খুবই সম্মানহানীকর। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা অতিদ্রুত বিষয়টি নিয়ে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিব।

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী জানান, বিষয়টি নিয়ে জেনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।