সাতক্ষীরায় রাস্তার ধারে ৭ বছরের শিশু, নিলো না অভিভাবকরা! অতপর…

সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার কাজিরহাট বাজারে রাস্তার ধারে অনেক মানুষের ভিড়। চোখ পড়লো বাজারের কিছু লোক জড়ো হয়ে অচেনা এক শিশু ছেলেকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করছে, কিন্তু শিশুটি কিছুতেই কিছু বলছে না।

সেখানে উপস্থিত কলারোয়া নিউজ’র সহ.সম্পাদক সরদার জিল্লুর শিশুটিকে কাছে নিয়ে আদর করে পরিচয়-ঠিকানা জানার চেষ্টা করলেন। অনেকক্ষণ অনেককিছু জিজ্ঞাসা করার পর শুধুমাত্র নিজের নাম সোবহান ও বাবা মোক্তার হোসেন ও মায়ের নাম মর্জিনা খাতুন ছাড়া কিছুই বলতে পারলো না শিশুটি। বিভিন্নভাবে কথা বলে শেষমেশ গ্রামের নাম জানা গেলো অনুপামপুর। কিন্তু জেলা, উপজেলা বলতে পারলো না।
তাৎক্ষনিক শিশুটিকে কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবিরের জিম্মায় দেন সাংবাদিক সরদার জিল্লুর।

ঘটনাটি গত ১৩ ডিসেম্বর রবিবার বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে।

এরপর নৈতিক দায়বদ্ধতা আর বিবেকের তাড়নায় শুধু গ্রামের নাম নিয়ে চললো ঠিকানা সংগ্রহের কাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন পরিচিত লোকের মাধ্যমে ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের অনুপামপুর গ্রামে শিশুটির বাড়ি বলে নিশ্চিত হওয়া গেলো। কলারোয়া থানা পুলিশ যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে প্রচেষ্টা চালালেন, সঙ্গে সাংবাদিক সরদার জিল্লুরও।

এরপর ওই গ্রামের (অনুপামপুর) ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন ও সংশ্লিষ্ট নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনি’র মোবাইল নং সংগ্রহ করে তাদের মাধ্যমে শিশুটির বাড়িতে খবর পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলো। কিন্তু ধান ছেড়ে চালে বেধে গেলো অর্থাৎ আরেক সমস্যা। শিশুটির বৈধ অভিভাবক তথা পিতা, মাতা কিংবা ভাই শিশুটিকে নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য।
তখন বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানালে তাদের পক্ষ থেকেও কোন সাড়া পাওয়া গেলো না।

সাংবাদিক সরদার জিল্লুরকে শিশু ছেলে সোবহান জানায়, শুক্রবারে তার মা তাকে বেদম মারপিট করলে সে বাড়ি থেকে রাগ করে চলে আসে। তার বাবা পেশায় একজন ভিক্ষুক।

নিয়ামতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রনি ও মেম্বর মোবারকও এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।

সাংবাদিক সরদার জিল্লুর ও কলারোয়া থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, উপায়ান্ত না পেয়ে ‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার’ নামে যশোরের একটি বেসরকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা হলো।

অতপর ১৪ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যার ৭টার দিকে কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবিরের সহযোগিতায় ও এসআই হামিদের প্রচেষ্টায় কলারোয়া থানায় আসলেন ‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার’ নামে যশোরের ওই বেসরকারী সংস্থার ৩জন কর্মকর্তা। তাদের নিকট তুলে দেয়া হলো ৭বছরের ওই শিশুটিকে।

‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার’র সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার এবিএম মুহিদ হোসেন সংস্থার পক্ষে স্বাক্ষর করে শিশুটিকে নিয়ে যান। যত দ্রুত সম্ভব শিশুটিকে তার অভিভাবকের হাতে তুলে দিবেন ওই অস্বচ্ছল পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন বলেও জানিয়েছেন।

কাজিরহাট এলাকার নাকিলা গ্রামের ইজিবাইক চালক সোহাগ জানান, ‘গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে শার্শার বাগআঁচড়া থেকে একপ্রকার জোর করে ও অনুনয়-বিনয় করে তার ইজিবাইকে উঠে পড়ে শিশুটি। অভিভাবকদের কথা জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলে না। বাধ্য হয়ে কাজিরহাট পর্যন্ত এসে স্থানীয় বাজারের লোকজনকে বিষয়টি অবগত করা হয়।’