সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি রঞ্জু গ্রেপ্তার

২০০২ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি আরিফুর রহমান রঞ্জু (৪৬) গ্রেপ্তার হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গ্রেপ্তার রঞ্জুর ভাইপো সজিব।

তিনি জানান, ‘বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতে (শুক্রবার) রাজধানী ঢাকার হাজারিবাগ এলাকার একটি বাড়ি থেকে আরিফুর রহমান রঞ্জুুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। শনিবার তাকে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে খবরে তিনি (সজিব) সেখানে যাচ্ছেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হাফিজ আক্তার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার সাজাপ্রাপ্ত আসামি আরিফুর রহমান রঞ্জুকে (৪২) গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।’

এর আগে, শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে বলে শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে জানান। তবে তার নাম, পরিচয় জানান নি।

গ্রেপ্তার আরিফুর রহমান রঞ্জুু কলারোয়া পৌরসদরের ঝিকরা গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের পুত্র। তিনি ছাত্রদল ও যুবদলের পদধারী নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় তিনি ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বলে জানা গেছে। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার রায় ঘোষনার আগ থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। একই মামলায় তিনিসহ তারা আপন ৩ ভাই সাজাপ্রাপ্ত। তার মেঝ ভাই বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান সাবু কারাগারে থাকাকালীন গত ১৪ জুন মৃত্যুবরণ করেন। আর ছোট ভাই তাওফিকুর রহমান সঞ্জু এখনো কারান্তরীণ।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে যান। সড়কপথে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা করা হয়।

ঘটনার ১৯ বছর পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার একটি আদালত ৫০ জনকে নানা মেয়াদে সাজা দেয়।

সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব আরিফুর রহমান রঞ্জু ও আরিফুর রহমান রিপনকে দেয়া হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড। রঞ্জু ও রিপন ছিলেন পলাতক। তাদের মধ্যে রঞ্জু ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ওই মামলায় পলাতক আরেক আসামি যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চুকে দেয়া হয়েছে ৯ বছরের কারাদণ্ড। বাকি ৪৬ জন আসামিকে চার বছরের কারাদণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

সেদিন ৩৪ আসামির উপস্থিতিতে রায় দেয়া হয়। তাদেরকে সেদিনই কারাগারে পাঠানো হয়।

হামলার পর ওই ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৭৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করতে যান। তবে তাতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালতে মামলা করেন তিনি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মামলাটি আটকে থাকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৫ সালে বিএনপির তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা হয়। ওই মামলায় তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন হয়।

২০১৫ সালের ১৭ মে হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনকে সাক্ষী করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ সফিকুর ইসলাম।

এই মামলাটির শুনানি থামাতে হাইকোর্টে একের পর এক আবেদন করেছেন আসামিরা।

একটি আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেই রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর গত ৬ অক্টোবর সে রুলের শুনানি শেষে রুলটি খারিজ করে হাইকোর্ট।

গত ৮ অক্টোবর মামলাটি তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

সবশেষ আবেদন হয় আসামি রাকিবুর রহমানের পক্ষ থেকে। ঘটনার সময় তিনি ১০ বছর বয়সী তথা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন দাবি করেন। তবে গত ২৪ নভেম্বর তার আবেদন খারিজ হলে এই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে আর কোনো আইনি বাধা থাকেনি।