সারাদেশে ১৬৮১টি মাদরাসা উন্নয়নের সিদ্ধান্ত

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-৪ বাস্তবায়নে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সারাদেশে নির্বাচিত এক হাজার ৬৮১টি মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। ‘নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এ বরাদ্দের অর্থ যোগান দেওয়া হবে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) শিক্ষা পরিসংখ্যান–২০১৬ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে মাত্র তিনটি মাদ্রাসা সরকারি এবং বাকি ৯ হাজার ৩০৮টি মাদ্রাসা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা এমপিও’র মাধ্যমে সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, বেশিরভাগ বেসরকারি মাদ্রাসার অবকাঠামো ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে চার হাজার ৫৫৯টি মাদ্রাসায় দুই থেকে তিনটি শ্রেণিকক্ষ সংবলিত একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি চার হাজার ৭৫২টি মাদ্রাসায় এখনও পর্যন্ত কোনও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। অধিকন্তু, এখনও পর্যন্ত ৯৭৮টি মাদ্রাসার অবকাঠামো সম্পূর্ণ কাঁচা এবং দুই হাজার ১৪৭টি মাদ্রাসায় সম্পূর্ণ পাকা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।

ব্যানবেইসের তথ্য মতে, বেশির ভাগ মাদ্রাসায় অবকাঠামোগত উন্নত সুবিধা এখনও গড়ে ওঠেনি। ফলে অবকাঠামোগত সুবিধা বঞ্চিত ওইসব মাদ্রাসায় অনুন্নত পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হওয়ায় পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে উক্ত মাদ্রাসাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাকা অবকাঠামো তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সারাদেশে নির্বাচিত এক হাজার ৬৮১টি মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য অর্জনে নির্বাচিত এক হাজার ৬৮১টি মাদ্রাসায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরাসহ নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হাই-বেঞ্চ ও লো-বেঞ্চ এবং চেয়ার ও টেবিল সরবরাহ করা করা হবে। এছাড়া, সাধারণ শিক্ষার (স্কুল/কলেজ) বিপরীতে মাদ্রাসা শিক্ষায় বিদ্যমান অবকাঠামোগত বৈষম্য কমিয়ে সমতা আনা হবে। শহর (মহানগর/জেলা শহর/উপজেলা) এলাকাসহ গ্রাম ও পিছিয়ে থাকা এলাকার মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সুবিধা বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রম সৃষ্টি করা সম্ভব হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট স্থাপন করা হবে। এছাড়া, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট ও যাতায়াতের জন্য র‌্যাম্প স্থাপনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ১৬৮১টি মাদ্রাসায় শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হবে। গ্রাম ও শহর-সমতল এলাকায় ১২৩৪টি মাদ্রাসায় চার তলা ভবন, নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে ৯৭টি মাদ্রাসায়। বিভাগীয় শহর ও মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ৫০টি মাদ্রাসায় ছয় তলা ভবন, পাহাড়ি এলাকার জন্য ২০টি মাদ্রাসায় চার তলা ভবন, দেশের উপকূলীয় এলাকার জন্য ১০০টি মাদ্রাসায় চার তলা ভবন, দেশের হাওর-বাওড়, বিল, নদীবহুল এলাকার জন্য ৮০টি মাদ্রাসায় ছয় তলা ভবন, লবণাক্ত এলাকার জন্য ১০০টি মাদ্রাসায় চার তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় যানবাহন, আসবাবপত্র ক্রয় করা হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৬ হাজার ৭১৪ জনকে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ২৫ জনকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি এসডিজি বাস্তবায়নেও সহায়তা করবে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হবে।’ তিনি জানান, অতীতের কোনও সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য এত বড় প্রকল্প গ্রহণ করেনি।’