সিআরপিসি যুগোপযোগী করার সরকারি সিদ্ধান্ত ইতিবাচক : আ স ম রব

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ফৌজদারী কার্যবিধি আইন (সিআরপিসি) যুগোপযোগী, প্রয়োজনীয় সংশোধন পরিমার্জন ও সংস্কার করার লক্ষ্যে সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘ইতিবাচক’ আখ্যায়িত করে গণমাধ্যমে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন “স্বাধীনতার বহুবছর পর হলেও ১২৩ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ফৌজদারী কার্যবিধি আইন (সিআরপিসি) যুগোপযোগী করার সরকারের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। যদি জনগণের আইনি অভিগম্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন দেশের যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তা হবে নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং গণমুখী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

এই নতুন আইন প্রণয়নে শুধু আমলা নয় জনগণের সকল অংশের অভিমত গ্রহণের উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে।

আজ অনেকে অনুধাবন করতে পারছেন যে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়।

স্বাধীনতার পরবরর্তীতে প্রায় ১২০০ এর মত উপনিবেশিক আইন বহাল রেখেই শাসন ব্যবস্থা চালু করায় প্রকৃত পক্ষে দেশ এক অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ (Internal Colony)-এ পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরের রাজনীতি ও প্রশাসনে ঔপনিবেশিক আমলের মন মানসিকতার প্রাধান্য রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক নেতারা হয়ে গেছেন ব্রিটিশ কায়দায় শাসক আর আমলারা হয়ে গেছেন ক্ষমতার মালিক। ফলশ্রুতিতে দলবাজি, সন্ত্রাস আর পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতিতে রাষ্ট্র চরম ঝুঁকিতে উপনীত হয়েছে। স্বাধীন দেশের উপযোগী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে গড়ে উঠতে পারেনি মহৎ কোন দৃষ্টিভঙ্গি। জ্ঞান চর্চা, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ এবং উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে গোটা সমাজব্যবস্থা আজ ব্যাধিগ্রস্থ।

সুতরাং উপনিবেশিক আমলের আইন ও বিধি-বিধান পরিবর্তনের সাথে শাসন ব্যবস্থা বদল করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উপনিবেশিক আমলের শাসন, শোষণ ও নিপীড়ন এর জন্য প্রণীত আইন বাতিল এবং স্বাধীন দেশের উপযোগী আইন প্রবর্তন করা রাষ্ট্রীয় জরুরি কর্তব্য।

এখন সময় এসেছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিবেচনা করে হাজার বছরের পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী একটি নতুন রাজনৈতিক মডেল প্রতিস্থাপন করা। এই নতুন রাজনৈতিক মডেলের উপযোগী কর্মসূচি সিরাজুল আলম খানের ১৪ দফা ও জেএসডির ১০ দফায় উত্থাপন করা হয়েছে।

যে রাজনৈতিক মডেলের মাধ্যমে গোটা রাষ্ট্রকাঠামো ও শাসন ব্যবস্থাকে অধিকতর গণতন্ত্র ভিত্তিক অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি শ্রম, কর্ম ও পেশার জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা ‘অংশীদারিত্ব গণতন্ত্র’ নামে সংজ্ঞায়িত।

উপনেবেশিক আইন বদল ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে (১) সিআরপিসি সহ সকল উপনিবেশিক আইন পরিবর্তন, সংযোজন ও আধুনিকায়নে ‘স্বাধীন আইন কমিশন’ গঠন করতে হবে; এবং (২) স্বাধীন দেশের উপযোগী আইন প্রবর্তনে জনগণের অভিমত প্রতিফলনে শ্রম, কর্ম ও পেশাসহ সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণ করতে হবে।

আসুন ব্রিটিশ প্রণীত সিআরপিসি আইন বদল এর মধ্য দিয়ে উপনিবেশিক শাসন-শোষণ নিপীড়ন ভিত্তিক রাষ্ট্রকাঠামো উচ্ছেদ করে গণমুখী গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র’ বিনির্মাণে নতুন জাগরণ সৃষ্টি করি।”