সিটি নির্বাচন : সিলেটে জামায়াতের ভরাডুবি

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়ে জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব আর ভুল বোঝাবুঝি বাড়িয়েছে জামায়াত। তাদের প্রার্থী তুমুল জনপ্রিয় এবং তারা জিতবেন, এমন দাবি ছিল দলটির। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা গেল, জামানত হারিয়েছেন দলটির প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

এই নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল পেতে অবশ্য এখনও বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। গোলযোগের জন্য স্থগিত দুই কেন্দ্রের ভোট সংখ্যা দুই প্রধান প্রার্থী বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমেদ কামরানের মধ্যে ব্যবধানের চেয়ে বেশি। ফলে আইন অনুযায়ী এই দুই কেন্দ্রে আবার ভোট নিয়েই ঘোষণা করতে হবে ফল।

১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টিতে আরিফুল হক পেয়েছেন ৯০৪৯৬ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। তবে গোলযোগের জন্য স্থগিত দুই কেন্দ্রে ভোট স্থগিত আছে। আরিফুল তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের চেয়ে চার হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন। আর স্থগিত দুই কেন্দ্রে মোট চার হাজার ৭৮৭। তাই কামরানকে জিততে হলে এই দুই কেন্দ্রের শতভাগ ভোট পেতে হবে, যেটাকে অসম্ভবই বলা যায়।

আবার এই দুই কেন্দ্রের শতভাগ ভোট পেলেও জামায়াতের এসহানুল মাহবুব জুবায়ের তার জামানত ফিরে পাবেন না।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ না পেলে জামানত হিসেবে জমা দেয়া টাকা ফেরত পান না। এটি টাকার অংকে হয়ত বেশি না, কিন্তু সম্মানের বিষয়।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের পক্ষে দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। তাই টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট করতে হয়েছে জুবায়েরকে।

১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টিতে জামায়াত নেতা ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৫৪টি। কিন্তু ভোট পড়েছে মোট এক লাখ ৯১ হাজার ২৮৯টি। অর্থাৎ শতকরা হিসেবে জামায়াত নেতা ভোট পেয়েছেন ৫.৭ শতাংশ, যা জামানত রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ভোটের অর্ধেকও না।

এই নির্বাচনে জামায়াত কত ভোট পায়, সে দিকে দৃষ্টি ছিল রাজনীতি নিয়ে উৎসাহীদের। স্বাধীনতাবিরোধী দলটি বরাবর তাদের প্রকৃত শক্তির চেয়ে নিজেদের বেশি শক্তিশালী হিসেবে ভাবতে পছন্দ করে। যদিও এককভাবে ভোট করে তাদের খুব বেশি ভোট পাওয়ার ইতিহাস নেই। ১৯৯১ সালে বিএনপির সঙ্গে গোপন সমঝোতা আর ২০০১ সালে জোট করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে জিতলেও ১৯৯৬ সালে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ভরাডুবি হয় দলটির।

জামায়াত বরাবর দাবি করে আসছিল, তাদের জনভিত্তি প্রবল, কিন্তু জোটের কারণে সেটা প্রকাশ হয় না। কারণ, বিএনপির বাক্সে তাদের কত ভোট পড়ে, সেটা বোঝার সুযোগ নেই। তাই সিলেটে জামায়াত আলাদা নির্বাচন করায় তাদের শক্তি আসলে কতো, সেটি জানার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল।

জামায়াত ভোট জয়ে বাধা হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল বিএনপির। তাই তারা জুবায়েরকে ভোট থেকে সরিয়ে দিতে নানা চেষ্টা করে। কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল দলটি উপেক্ষা করেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের অনুরোধও।

জামায়াতের হঠাৎ এই নির্বাচনে বিএনপির বিপরীতে প্রার্থী দেয়া আর রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে না থাকায় দলটিকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়ায়। জামায়াত সরকারের সঙ্গে কোনো গোপন সমঝোতায় গিয়ে বিএনপিকে হারাতে চায় কি না, এ নিয়ে শুরু হয় নানা কথাবার্তা।

তবে সিলেটে নানা কর্মসূচিতে জুবায়ের এবং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তার সমর্থকরা ঘোষণা দিতে থাকেন, তারা কাউকে জেতাতে নয়, জিততে এসেছেন।

জামায়াতের নেতারা ভোটের প্রচার শুরুর আগে থেকে দাবি করে আসছিলেন, তাদের প্রার্থীর ব্যাপক জনভিত্তি আছে আর তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছেন। ফলে তিনি অনেক ভোট পাবেন।

ভোটের আগের দিন জামায়াতের প্রার্থী জুবায়ের জয়ের প্রত্যাশার কথাও বলেছিলেন। ঢাকাটাইমসকে সেদিন তিনি বলেন, ‘দুই মেয়রকেই মানুষ ভোট দিয়েছে। কিন্তু নগরীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। মানুষ এবার পরিবর্তন করে নতুন মুখ দেখতে চায়। আশা করছি মানুষের রায় নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হব।’

তবে জামায়াত নেতার মেয়র হওয়া হলো না, উল্টো জামানতের টাকাটাও খুইয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতি আরেকটু বাড়ল তার।