সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রশাসন ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষ! এসিল্যান্ডসহ ৬ জন আহত

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে খেলার মাঠে আশ্রায়ণ প্রকল্প করাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও গ্রামবাসী মুখোমুখি! এসিল্যান্ডসহ আহত ৬ জন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া-হলদীঘর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের সাথে স্থানীয় জনগণের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান ও স্থানীয় নারী, শিশুসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার বলদীপাড়া-হলদীঘর খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে প্রশাসন। স্থানীয়রা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছিলেন। তারা খেলার মাঠ রক্ষায় বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন।

রোববার (২১ আগস্ট) সকালে মাটি ভরাটের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়ে ওই মাঠে যাচ্ছিলেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান। পথে মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারীরা তাদের বাধা দেন। তারা গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং ও বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেন। ব্যারিকেড ভেঙে জোর করে মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে গ্রামবাসীর সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনের সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে শাহজাদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তাঁকে সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষে আহত হয় স্থানীয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন (১০), মনিজা খাতুন (৩০), আলেয়া (৪০), জুফা খাতুন (৩৫) ও মরিয়ম বেগম। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারীরা সাংবাদিকদের জানান, কয়েক পুরুষধরে তারা এই মাঠে খেলাধুলা করে আসছেন। মাঠটি প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এবং কয়েক গ্রামের একমাত্র খেলার মাঠ এটি। মাঠ রক্ষায় আশপাশের ৬ গ্রামের হাজারো নারী-পুরুষ গত ১৪ জুলাই মানববন্ধনও করেন। তারা খেলার মাঠে ঘর নির্মাণ না করে অন্যত্র করার দাবি জানান। কিন্তু তাদের যৌক্তিক দাবি অস্বীকার করে প্রশাসন জোর করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করতে চায় এখানে।

এলাকাবাসীর দাবি, রোববার (২১ আগস্ট) মাটি ভরাটের উদ্দেশ্যে এসে তারা (প্রশাসন) নির্বিচারে নারী ও শিশুদের ওপর হামলা চালায়। স্থানীয়রা কেবল বালু নিক্ষেপ করে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের সঙ্গে গাড়াদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ কিছু অস্ত্রধারীও তাদের ওপর হামলা চালায়।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য রোববার (২১ আগস্ট) সকালে আমি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া-হলদীঘর-এ সরেজমিন পরিদর্শনে যাই।

সেখানে এলাকার উশৃঙ্খল কিছু যুবক ও নারীরা আমাদের পথ রোধ করে এবং অশালীন আচরণ করে। এক পর্যায়ে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে এসিল্যান্ডের মাথা ফেটে যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাসুদ রানা জানান, শাহজাদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমানের আঘাত বেশ গুরুতর। তার মাথায় ৮টি সেলাই দেওয়া হয়েছে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহজাদপুরের বাইরে থাকায় এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) হাসিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।