সিলেটে দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ! ১৫৬ জন শিক্ষক বিপাকে

বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) কর্তৃক পরিচালিত দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট অঞ্চলের ৭৮টি মাদ্রাসার প্রায় ১৫৬ জন শিক্ষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন।

সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ৩৯টি উপজেলায় ২টি করে মোট ৭৮টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এ সকল মাদ্রাসায় নিয়োগ করা হয় ১৫৬ জন শিক্ষক। ক্বওমী সনদের স্বীকৃতির পর এটি ছিল ক্বওমী আলেমদের প্রথম সরকারি নিয়োগ। শুরুতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব সিলেবাসে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু হলেও ২০১৯ সালে এসব মাদ্রাসাকে ৫ম শ্রেনিতে উন্নীত করা হয়। এ শিক্ষা কার্যক্রম একটি প্রকল্পের আওয়াতা দিন চলছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা)র।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এ সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও ধর্মমন্ত্রণালয়ের বিশেষ চাহিদায় প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছিল। ডিসেম্বর মাস থেকেই শিক্ষকদের বেতন বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর করোনাকালে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এ সকল মাদ্রাসাও বন্ধ হয়ে যায়। গত ২০২০ সালের মে মাসে এ সংক্রান্ত প্রকল্পটিও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে যায়। এরপর থেকে শিক্ষকরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েন। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়েও নানা শঙ্কা দেখা দেয়।

দারুল আরকাম মাদ্রাসায় কিরাআতুল কুরআন, আল-হাদীসুন্নাবী, আল-লুগাতুল আরাবিয়া, আদ্দীনিয়াত, সমাজ বিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হতো। শিক্ষকদেরকে প্রতি মাসে ১১ হাজার ৩০০ টাকা করে বেতন দেয়া হতো। ব্যাংকিং পদ্ধতিতে বেতন পেতেন শিক্ষকরা। দেয়া হতো দুটি ঈদের পৃথক দুটি বোনাসও। মাদ্রাসা সমূহে বছরে দুটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হতো।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প (৬ষ্ঠ পর্যায়) অনুমোদনকালে ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের (৬ষ্ঠ পর্যায়) অধীনে প্রথম পর্যায়ে ‘দারুল আরকাম’ নামে ১ হাজার ১০ টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

জানা গেছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া মাদ্রাসাগুলো চালুর জন্যে শিক্ষকরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, সচিব, বোর্ড অব গর্ভনর মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন, ড. সরকার কফিল উদ্দিন সালেহীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। একই দাবিতে বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন-স্মারকলিপিও দেন তারা।

ইফা’র সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রকল্প শেষ হওয়ায় মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে হয়তো ফাউন্ডেশন কোন পরিকল্পনা করছে। আমার এ বিষয়ে কোন কিছু জানা নেই।

ইফা’র পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক হাজেরা বেগম এ বিষয়ে বলেন, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্পে বিস্তারিত দেয়া আছে। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেবে। মাদ্রাসা গুলো আবারও পুরোদমে আগের অবস্থায় ফিরে আসুক তা আমরা চাই।