বনকর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের সহযোগীতায়

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের অভয়াশ্রমে অবাদে মাছ শিকার

সরকারী বিধি নিষেধ অমান্য করে অসাধু বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে উৎকোচের বিনিময়ে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৮০ ভাগ অভয়াশ্রমে অবাধে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে।

মাছের পরিমান বৃদ্ধি ও সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা অভয়াশ্রম ঘোষনা করলেও অসাধু বনকর্মকর্তা ও একদল প্রভাবশালীর চক্রান্তে তা ভেস্তে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা উৎকোচ বিনিময়ে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি, কটকা, কচিখালী, শ্যালা, কোকিলমনি, হরিণটানা ও কালামিয়াসহ এ সকল এলাকার অভায়াশ্রম এলাকার চর ও খাল ইজারা দিয়ে আসছে। গোন প্রতি (১৫ দিন) প্রতি খাল ১৫ থেকে বিশ হাজার ও প্রতি চর দশ থেকে বারো হাজার টাকায় ইজারা দিয়ে আসছে।

এছাড়া ছোট নৌকা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে অভয়াশ্রমগুলোতে অবাধে মাছ ধরার সুযোগ করে দিচ্ছে বনকর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলেরা জানায়, শরণখোলা রেঞ্জের খাজুরার চর, টিয়ার চর, তালবাড়িয়ার চর ইজারা নিয়েছেন সোনাতলা গ্রামের সাবেক এক ইউপি সদস্য, রামপালের বড় মিয়া। এছাড়া কটকা এলাকার অধিকাংশ চর ও খাল দখল করে রেখেছেন উপজেলার বকুলতলা গ্রামের মাতুব্বর নামধারী এক দালাল। অন্যদিকে, কচিখালী এলাকার কয়েক কিলোমিটার চর ও সুপতির কাপ খ্যাত এলাকা দখল করে ওই চক্র ১৪ টি জেলে বহরের মাধ্যমে চরগড়া দিয়ে মাছ স্বীকার করে আসছেন।

এছাড়া, বন বিভাগের সহযোগীতায় উপজেলার রাজাপুর এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ধানসাগর ষ্টেশনের আওতাধীন বালুমালা খাল, কলামুলা খাল, বেড়ির খাল ও তুলাতলা এলাকার অভয়াশ্রম ও বিল ৮/১০টি জেলে বহরের মাধ্যমে নিষিদ্ধ চরগড়া, বেন্দি জাল ও টোনা জাল দিয়ে মৎস্য স্বীকার করে আসছে।

আহরিত মাছ নিয়ে জেলেরা লোকালয়ে ফেরার পথে তা যাচাই-বাছাই করে দেখার দ্বায়িত্ব বনরক্ষদের থাকলেও রহস্যজনক কারনে তারা নিশ্চুপ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাগেরহাট সদর ও শরণখোলা উপজেলার সাধারন বনজীবিরা গোপন ভিডিও ও অডিও বক্তব্যে জানায় পূর্ব সুন্দরবনের আরকোদালিয়া, পাকার খাল, বড় কটকা, টিয়ার চর, ছাপড়াখালী, আড়াইবেকী, সিডকটকা ও কালামিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার অভয়াশ্রমে বড়শি, কোরাল জাল, চরগড়া, টেংজাল ব্যবহার করে মাছ শীকার করে আসছে। অভিযোগ উঠেছে কটকা, কচিখালি, সুপতি, স্টেশনের বনরক্ষীরা এ সকল জেলেদের কাছ থেকে গোন প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করা শুরু করে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে সুন্দরবন অঞ্চল সহ-ব্যবস্থাপনা নেটওয়ার্কের সভাপতি ও শরণখোলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামন মিলন বলেন, ২০২০ সালের পূর্বে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা মৎস সম্পদ বৃদ্ধি ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় অভয়ারণ্য ঘোষণা করেন। কিন্তু পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন ষ্টেশন ও ফারির কতিপয় অসাধু বনকর্মকর্তা ও কর্মচারিরা অণৈতিক সুবিধা নিয়ে শতাধিক নৌকা, অর্ধ শতাধিক ট্রলারে কয়েকশত জেলেকে অভায়াশ্রমে মাছ ধরার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আর এর সাথে জড়িত রয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা, পিরোজপুরের পাথরঘাটা, চরদোয়ানি ও রামপালের প্রভাবশালী নামধারী এক ধরনের জেলে।

এ ব্যাপারে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব বলেন, আমি সদ্য শরণখোলা রেঞ্জে যোগদান করেছি। তবে অভায়াশ্রমে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে বিষয়টি জানার পরে অভয়াশ্রম এলাকার কটকায় অভিযান চালিয়ে গত ১৪ এপ্রিল জালসহ ৩ জেলেকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদি এর সাথে কেউ জড়িত থাকে ও অভয়াশ্রম কেউ দখল করে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেনের মুঠোফোনো ০১৭….৪৫০০ নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো এর কাছে জানতে চাইলে তিনি অভয়াশ্রমে মাছ ধরার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। তবে অভয়াশ্রমে মাছ ধরতে জেলেদের সাথে যদি বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারি জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্থ করেন।

এ ব্যাপারে প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মোঃ আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের অভয়াশ্রম দেখার দায়িত্বে রয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেন ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব। তাদেরকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। যদি অভায়াশ্রমে মাছ ধরার সাথে বনবিভাগের কেউ জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।