সেই তাপস বৈশ্য এখন কোথায়?

‘২৮ জুলাই মনে থাকবে না? অভিষেক ক্যাপ পরার স্মৃতি মনে পড়ে। আমার প্রথম টেস্ট উইকেট ছিল জিহান মোবারক। দুই আম্পায়ারের একজন ছিলেন ডেভিড শেফার্ড। প্রচণ্ড গরম ছিল। অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম’—তাপস বৈশ্য ফিরে যান ১৫ বছর আগে। কলম্বো টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের ছবিটা জীবন্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ দলের সাবেক এই পেসারের স্মৃতিপটে।

অনেক কিছুই বললেন। আসল ঘটনাটা তো বললেন না! কোন ঘটনা, ধরতে তাপসের এক সেকেন্ডও লাগে না—‘৫২ রানের ইনিংসটা তো? ওটা মনে থাকবে না?’ এরপর তাপসের সরল স্বীকারোক্তি, ‘ওটা আসলে হয়ে গেছে। অমন ইনিংস আর খেলতে পারিনি।’

এখন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার লড়াইটা হয় সমানে সমান। এমনকি কখনো লঙ্কানদের চেয়ে ঢের এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। ১৫ বছর আগে ছবিটা এমন ছিল না। টেস্টে দুই দলের লড়াই ছিল অসম, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ হারবে—এটাই যেন ছিল অলিখিত নিয়মে। তাপসের অভিষেকের কথাই ধরুন, শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে অলআউট ৩৭৩ রানে। বাংলাদেশের বোলারদের নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য। কিন্তু সাফল্যটা মাটি হয়ে গেল বাজে ব্যাটিংয়ে। তাপস যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন, ১২৩ রানে ৮ উইকেট নেই! একই টেস্টে আরেক অভিষিক্ত খেলোয়াড় অলক কাপালির সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়লেন তাপস। নবম উইকেটে মঞ্জুরুল ইসলামের সঙ্গে ৪০ রানের জুটি। তবুও বাংলাদেশ অলআউট ১৬৪ রানে, তাপস অপরাজিত ৫২ রানে।

ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কীভাবে শ্রীলঙ্কান বোলারদের সামলেছেন, সেটিই কাল সুদূর আমেরিকা থেকে ফোনে বলছিলেন তাপস, ‘তখন ভেবেছিলাম, নিজের ব্যাটিংটা করি। ওভাবে চিন্তাভাবনা করে ব্যাটিং করিনি। বাজে বল পেয়েছি আর মেরেছি। নিজের প্রথম টেস্টে অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম। কীভাবে যেন হয়ে গিয়েছিল। ওদের উপুল চন্দনা বেশ প্রশংসা করেছিল আমার ব্যাটিংয়ের।’ ২১ টেস্টের ক্যারিয়ারে আরও একটি ফিফটি আছে তাপসের। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিশ্চিত হারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ৪৭ বলে ৬৬ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। টেস্টসুলভ না হলেও চট্টগ্রামে তাপস সেদিন আবারও প্রমাণ করেছিলেন নিজের ব্যাটিং-ক্ষমতা।

যেকোনো বোলারের স্বপ্ন থাকে দারুণ বোলিং করে অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখতে। তাপসের হয়েছে উল্টো। বোলিং দিয়ে নয়, ভালো ব্যাটিং করে স্মরণীয় করে রেখেছেন নিজের অভিষেক। ওই টেস্টে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র ১টি। অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পরও তাই অভিষেক নিয়ে অতৃপ্ত তিনি, ‘খেলেছি পেসার হিসেবে। ভালো বোলিংই ছিল মূল লক্ষ্য। কিন্তু সেটি না হওয়া অতৃপ্তি থেকে গেছে।’

তবে যে ইনিংস তাপসকে অতীত থেকে ফিরিয়ে আনে বর্তমানে, সেটির আনন্দ যেন ম্লান হয়ে যায় দলীয় ব্যর্থতায়। শ্রীলঙ্কা টেস্টটা জিতে গিয়েছিল তিন দিনেই। এই স্মৃতি চাইলেও ভুলতে পারেন না তাপস, ‘তখন আমাদের দলটা শক্তিশালী ছিল না। তবুও ভাবিনি তিন দিনেই টেস্ট শেষ হয়ে যাবে। ভেবেছিলাম, অন্তত পাঁচ দিনে গড়াবে। গরমে কাহিল হয়ে গিয়েছিলাম, ফিটনেসেও অনেক ঘাটতি ছিল। কিন্তু এখন যখন দেখি শ্রীলঙ্কার মাটিতে আমরা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিচ্ছি, ভীষণ ভালো লাগে। ভারতীয়-পাকিস্তানিরা আমাকে বলে, তোমাদের দল এখন অনেক শক্তিশালী। কী যে গর্ব হয় তখন!’

গত বছরের জুলাই থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিউইয়র্কে বাস করছেন তাপস। ২১ টেস্ট ৩৬ উইকেট আর ৫৬ ওয়ানডেতে ৫৯ উইকেট পাওয়া এই পেসারের বর্তমান ব্যস্ততা নিজের একাডেমি নিয়ে। ভারতীয় ও পাকিস্তানি প্রবাসীদের সন্তানেরা ক্রিকেটের দীক্ষা নিতে আসেন বাংলাদেশের এই সাবেক ক্রিকেটারের কাছে। তবে তাপস এতে পুরোপুরি তৃপ্ত নন। তাঁর স্বপ্ন আরও বড়। নিজের অভিজ্ঞতাকে তিনি যে কাজে লাগাতে চান দেশের ক্রিকেটে।