হাজার গুণের ঔষধি নিমপাতা

নিমপাতা প্রায় সবার কাছে পরিচিত। বিশেষ করে গ্রাম-বাংলায় নিম গাছ বেশি দেখা যায়। ভেষজ চিকিৎসায় নিমপাতার ব্যবহার বহুল। যদি বাড়িতে একটি নিমগাছ থাকে একজন ডাক্তারের চেয়েও বেশি কাজ করে।

নিম (বৈজ্ঞানিক নাম : AZADIRACHTA INDICA) ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস, ফুল, ফল, তেল, বাকল, শিকড় সবই কাজে লাগে। নিম একটি বহু বর্ষজীবি ও চির হরিত বৃক্ষ। আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কাণ্ড ২০-৩০ ইঞ্চি ব্যাস হতে পারে। ডালের চারদিকে ১০-১২ ইঞ্চি যৌগিক পত্র জন্মে।

পাতা কাস্তের মতো বাঁকানো থাকে এবং পাতায় ১০-১৭টি করে কিনারা খাঁজকাটা পত্রক থাকে। পাতা ২.৫-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। নিমগাছে এক ধরনের ফল হয়। আঙ্গুরের মতো দেখতে এ ফলের একটিই বিচি থাকে।

জুন-জুলাইতে ফল পাকে, ফল তেতো স্বাদের। বাংলাদেশের সবত্রই জন্মে তবে উত্তরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। নিমগাছের বাকল ও শিকড় ঔষধি গুণসম্পন্ন। নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। চামড়ার ইনফেকশন রোধে এছাড়া ব্রণ, চুলকানি ও অ্যালার্জি রোধে নিমপাতা অনেক উপকারি।

এছাড়া শরীরের ব্যথা, কেটে গেলে, পুড়ে গেলে, কানব্যথা, মচকানো, মাথাব্যথা, জ্বর কমাতে নিমপাতা ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

ম্যালেরিয়া দূর করতে : নিমপাতা ম্যালেরিয়ার জন্য অনেক উপকারি। নিমপাতার নির্যাস ব্যবহারে ম্যালেরিয়া ভালো হয়। পানি বা এলকোহল মিশ্রিত নিমপাতার নির্যাস ব্যবহারে একই ধরনের ফল পাওয়া যায়।

মানসিক চাপ ও অশান্তি দূর করতে : যাদের বেশি মানসিক চাপ ও অশান্তি তাদের নিমপাতার রস নিয়মিত পান করা উচিত। কারণ অল্প পরিমাণ নিমপাতার নির্যাস খেলে মানসিক চাপ ও মানসিক অশান্তি কমে যায়।

আলসার নিরাময়ে ও জন্ডিস প্রতিকারে : নিমপাতার রস ও নিম বীজ থেকে আসা রস খেলে পেপটিক ও ডিওডেনাল আলসার ভালো হয়। এছাড়া ২৫-৩০ ফোঁটা নিমপাতার রস একটু মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে : ক্যান্সার প্রতিকারে নিমপাতার ভূমিকা অতুলনীয়। বিশেষ করে নিম তেল, বাকল ও পাতার রস ব্যবহারে ক্যান্সার-টিউমার, স্কিন ক্যান্সার প্রভৃতি ভালো হয়।

উঁকুন দূর করতে : মেয়েদের উঁকুন মাথায় হয়ে থাকে। আর উঁকুন হলে অনেক ক্ষেত্রে মাথায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই উঁকুন নিরাময় খুব দরকার। এক্ষেত্রে নিমের ফুল বেটে মাথায় মাখলে উঁকুন মরে যায়।

কৃমি নিরাময় করতে : কৃমি নিরাময় করতে নিমের গুণাগুণ অপরিসীম। ৩-৪ গ্রাম নিম ছাল চূর্ণ সামান্য পরিমাণ সৈন্ধব লবণসহ সকালে খালি পেটে সেবন করে গেলে কৃমির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত এক সপ্তাহ সেবন করে যেতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম মাত্রায় সেব্য।

রক্ত পরিষ্কার ও চর্ম রোগ : নিমপাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্ত চলাচল বাড়িয়ে হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও নিমের জুড়ি নেই। কাঁচা নিমপাতা ১০ গ্রাম ২ কাপ পানিতে জ্বাল করে ১ কাপ অবশিষ্ট থাকতে ছেঁকে নিয়ে প্রয়োজন মতো চিনি মিশিয়ে পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। উল্লেখিত নিয়মে প্রতিদিন ২-৩ বার, নিয়মিত ১-২ মাস পান করে যেতে হবে।

দাঁতের যত্ন : কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভালো থাকে। নিম পাউডার দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ও মাড়ি ভালো থাকে। নিমপাতার রস পানিতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়।

খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষত নিরাময়ে : কাটা-ছেড়া বা পোড়া স্থানে নিম পাতার রস ভেষজ ওষুধের মতো কাজ করে। নিম পাতার সঙ্গে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতের উপকার হয়। নিমপাতা ঘিয়ে ভেজে সেই ঘি ক্ষতে লাগালে ক্ষত অতি দ্রুত ভালো হয়।

নিম চা তৈরিতে : শুকনো নিমপাতা গুঁড়া অথবা তাজা নিমের ৬/৭টি পাতা গরম পানিতে ছেড়ে ২/৩ মিনিট জ্বাল দিয়ে মধু মিশিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় সুস্বাদু নিম চা, তবে নতুনদের জন্য সময়সীমা ১ মিনিট। যত বেশি জ্বাল দিবেন তত তিতা হবে।

ত্বকের যত্নে নিমপাতা : রূপচর্চায় অনেক আগ থেকেই নিম ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।

ফেসপ্যাক তৈরিতে : ১০টি নিমপাতা ও একটি ছোট কমলা খোসা ছাড়িয়ে অল্প পরিমাণ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। উপকরণগুলো মসৃণ করে পেস্ট তৈরি করতে হবে। অল্প পরিমাণ মধু ও দুধ পেস্টে মেশাতে হবে। ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করা যাবে। এটি ত্বকের ব্রুণ, কালো দাগ, চেহারায় ক্ষতের গর্ত দূর করবে। মধু এবং নিম উন্নতমানের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।

নিমের প্রসাধনীর গুণ : নিমের তেল, সাবান, ট্যালকম পাউডার, শ্যাম্পু, লোশন, ক্রিম, টুথপেস্ট, পাতার ক্যাপসুল বেশ প্রচলিত পণ্য। নিমের এসব পণ্য ত্বককে মসৃণ করে ও ইনফেকশনের হাত থেকে দূরে রাখে।

সূত্র : উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট