‘১২ লাখ টাকার ঘরটি এক বছরেই পদ্মার পেটে’

শরীয়তপুর: সামসুন্নাহার বেগম ঋণ করে পদ্মা নদীর দুই কিলোমিটার দুরে ১২ লাখ টাকা দিয়ে ২০১৬ সালে একটি পাকা বাড়ি তুলেন। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে পদ্মার ভাঙনে সামসুন্নাহারের সেই বাড়ির অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে বাকি অংশ ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করে ফেলে। এখন রাক্ষসি পদ্মার পাড় এসে চোখের পানি ফেলে ও তাকিয়ে থাকে সামসুন্নাহার।

নড়িয়া উপজেলার গ্রামের জালাল বেপারীর স্ত্রী সামসুন্নাহার বেগম। তার এক ছেলে ইতালিতে থাকেন। ছেলেকে ধার দেনা করে ইতালিতে পাঠান তিনি।

কথা হয় সামসুন্নাহারের সঙ্গে। তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন নেই। কান্নাই এখন আমার জীবনের বড় সত্য।

তিনি বলেন, ২২ শতাংশ জমি ছিলো আমাদের। স্বামী ব্যবসা করত। সেই ব্যবসার টাকা ও ঋণ করে সেই জমিতে আমার স্বামী ১২ লাখ টাকা দিয়ে ২০১৬ সালে একটি পাকা ঘর তুলি। আর ছেলেকে বিদেশে পাঠাই। ঘর তুলে ও ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর পর আমার স্বামী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরে। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর ঋণ আর পরিশোধ করতে পারছি না।

তিনি আরো বলেন, এই বিপদের মধ্যে আমাদের ফসলি জমি টুকু পদ্মার নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে ১২ লাখ টাকার বাড়িটির অর্ধেক নদীতে ভেঙে যায়। পরে সেই বাড়িটির অংশটুকু ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করি। আমার কোনো জায়গা রইল না। জমি ঘর সব হারালাম পদ্মায়। এখন অন্যের ঘরে থাকি ও খাই। এখন আর জীবনে কিছুই অবশিষ্ট নেই।

সামসুন্নাহার বলেন, আমার জাগা নাই। ঘরদুয়ার সব গেলগা। যে ডুগু আছিলো বাড়িঘর সব গেলগা। ওহন আর দেশে কেমনে থাকুম। দেশে খাকুন্না কোন লক্ষণ তো নাই। ভিটি বাড়ি হারা হইলাম কই গিয়া দারাইমু। ২৫ হাজার টাকা বেইচ্চা ফালাইছি। উঠাইছি ১২ লাখ টাকা দিয়ে। একটা বছর থাকতে পারলাম না। এর মতো কোনো দুঃখ আছে দুনিয়াতে। এখন মাইসের ঘরে থাকতেছি। রান্না বান্না খাওয় লওয়া মাইশের ঘরে করতাছি। মাইসের ঘরে কয়দিন থাকন যায়। আমি বলতে পারি না মুখে আহে না। ঘর উঠইয়া দেনা হইছি দেনাও পরিষদ করতে পারি নাই। সামসুন্নাহার বেগম। জালাল বেপারী, এক ছেলে তাদের দাবি সরকার যেনও থাকার যায়গা দেয়।

নড়িয়ায় পদ্মা নদীর ভাঙন অব্যহত রয়েছে। মঙ্গরবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ও বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভাঙনে শুভগ্রাম, বাঁশতলা, পূর্বনড়িয়া, উত্তর কেদারপুর ও পূর্ব কেদারপুর গ্রামের ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন মাসে পদ্মার ভাঙনে নড়িয়ার তিনটি ইউনিয়নে ও পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে ৬ হাজার ২৫০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। মঙ্গরবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধায় জব্বার বেপারির বাড়ি তিন তলা একটি ভবন নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

এদিকে নড়িয়ায় একটি ড্রেজার আসলে ও এখনো নদী খননের কাজ শুরু করতে পারেনি । তবে দুই একদিনের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে এমনটাই জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ভাঙন কবলিতদের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত সব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। আর পুর্নবাসন সহায়তা হিসেবে টিন ও নগদ টাকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।