৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিলে সুপ্রিমকোর্টের প্রশংসা

সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিল করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অনন্য ভূমিকার প্রশংসা করেছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট দিবসের আজকের এই অনুষ্ঠানে সেসব অকুতোভয় বিচারপতি যাঁরা বন্দুকের নলের কাছে নতি স্বীকার না করে এবং নিজেদের বিবেককে বিকিয়ে না দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন, আমি তাঁদের গভীর কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি।’

রাষ্ট্রপতি আজ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিন বিভাগ অর্থাৎ নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক ও সমন্বয় খুবই জরুরি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এটা দরকার। তিনি মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনতে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশব্যাপী আদালতে ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে অনলাইন কজ-লিস্ট চালু হয়েছে এবং অনলাইন বেল কনফারমেশন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চলছে— এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু কোর্ট অব রেকর্ড সেহেতু এর সকল নথিকে ডিজিটাল নথিতে পরিণত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলখানা থেকে আদালতে আসামিদের উপস্থিত করা এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে ভবিষ্যতে ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। সরকার এসব বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে জুডিশিয়াল রিভিউ ক্ষমতা। এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন যে, জ্ঞানের চর্চায় আইনজীবীগণ পূর্বের চেয়ে আরও এগিয়ে যাবেন এবং তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, সততা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করবেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক ও সমন্বয় খুবই জরুরি। দেশ ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিটি বিভাগকে সহযোগিতা ও আস্থার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোন বিভাগের কর্মকাণ্ডে- অন্য কোনো বিভাগের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত বা জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত না হয়।

ভাষণের শুরুতে রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু ধনী-দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও জাজেস কমিটির সভাপতি মির্জা হোসেইন হায়দার প্রমুখ বক্তব্য দেন।