এবার বান্দরবান সরকারী মহিলা কলেজে রডের বদলে বাঁশ
এবার বান্দরবান সরকারী মহিলা কলেজের ড্রপ ওয়ালে রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ। বান্দরবান সরকারী কলেজের নির্মাণাধীন ভবনের চারতলা বারান্দায় ড্রপ ওয়ালে রডের ফাঁকে ফাঁকে এ বাঁশ দেয়া হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ডের ৮১ লাখ টাকার এ কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউএন এন্টারপ্রাইজের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা ঠিকাদার উজ্জল বাবু।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সরকারী মহিলা কলেজের ৪তলা ভবনের ড্রপ ওয়ালের নির্মাণ কাজে রডের পাশাপাশি চিকন করে কাটা বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি ধাপে একটি রড়, একটি বাঁশ ধাপে ধাপে দেয়া হচ্ছে। এভাবে প্রায় ২০০ ফুটেরও অধিক এলাকা জুড়ে এ বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, কয়েকদিন ধরে আমাদের কলেজের চারতলায় ভবনের কাজ চলছে। সকাল থেকেই লেবাররা বড় বড় বাঁশ কেটে চিকন করছে। বিকালে দেখি রডের ফাঁকে ফাঁকে এ বাঁশগুলোকে রডের পরিবর্তে ব্যবহার করছে। তাদের মতে যদি এভবনটি একই ঠিকাদার করে থাকে তাহলে আরো একাধিক বাঁশ এভবনের ভেতরে থাকতে পারে। ঠিকাদারের এ সব কর্মকান্ডে ভবনের ভেতরে ঢুকতেও আমাদের ভয় লাগছে।
কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী জানান, আমরা এতদিন শুনেছি দেশের বিভিন্ন জায়গায় রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের কথা। কিন্তু আজ আমরা আমাদের নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের চোখেই দেখলাম এ অবিশাস্য কাহিনী।
যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম ২নম্বরী কাজ করে, যারা আমাদের মত ছাত্রীদের জীবনের তোয়াক্কা করেনা, তাদেরমত ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিলসহ ঠিকাদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে বান্দরবানের হাসান জানান, ঠিকাদার উজ্জল বাবু বান্দরবানের একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার। তিনি বান্দরবান প্রতিমন্ত্রীর খুব কাছের মানুষ হওয়াতে কেউ তার কাজে কিছু বলার সাহস পায়না। তিনি এযাবত পর্যন্ত যে সব কাজ করেছেন সবই খুব নিম্নমানের। এভাবে কাজ করে আজ তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
নির্মাণ শ্রমিক আলী হোসেন জানান, রডের ভেতরে বাঁশ দিলে কাজটি অনেক শক্ত ও টেকসই হয়। তাই আমি এ বাঁশ ব্যবহার করছি। বিষয়টি ঠিকাদারও জানেন।
এ ব্যাপারে বান্দরবান সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ বড়ুয়া বলেন, আমি কলেজে নাই। তবে আমি রডের পরিবর্তে বাঁশ দেবার কথা শুনে তাৎক্ষণিক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছি। ঠিকাদার যে কাজটি করেছে তা বড়ই অন্যায় করেছে। এতে ছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। আমি কলেজে এসে অবশ্যই এর জন্য ব্যবস্থা নেব।
ঠিকাদার উজ্জল বাবু বলেন, সিমেন্ট ভাল করে দেয়ালে লাগার জন্য আমার নির্মাণ শ্রমিক বাঁশ ব্যবহার করছিল। তবে এ বিষয়গুলো আমি জানতাম না। জানার পরপরই আমি আমার শ্রমিককে বাঁশ খুলে ফেলতে বলেছি। তবে যতটুকু রড ব্যবহার করার কথা ছিল তার থেকে কোন কম রড ব্যবহার করা হয়নি।
এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নুর হোসেন বলেন, আমি চট্টগ্রাম এসেছি চিকিৎসার জন্য। তবে দীর্ঘদিন কলেজের ড্রপ ওয়ালের কাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু কাজ শুরু করে বাঁশ কেন দিচ্ছেন তা আমি জানিনা। আমি কাল বান্দরবানে এসে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব।
কাজটিকে করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউএন এন্টারপ্রাইজের নামে কাজটি করছে আওয়ামীলীগ নেতা উজ্জল বাবু ও তাপস মিলে কাজটি করছে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল আজিজ বলেন, উজ্জল বাবু সব কাজেই বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করছেন। আজ মহিলা কলেজে বাঁশ দেয়ার ঘটনাটি খুবই দু:খ জনক। আমরা তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেব।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন