আনন্দ-বেদনায় ঈদ উদযাপন রোহিঙ্গাদের
আনন্দ-বেদনায় ঈদুল আজহা উদযাপন করছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। ঈদের নামাজ আদায়ের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন ইমাম ও মুসল্লিরা।
সোমবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে টেকনাফ-উখিয়ার ৩০টির বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে ঈদুর আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সব জামাতে মোনাজাতে অংশ নেয়া মুসলিমরা নির্যাতনের বিচার চেয়ে ও নিজ দেশ মিয়ানমারে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য প্রার্থনা করেন। এছাড়াও তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার-জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
টেকনাফের বিভিন্ন শিবির ঘুরে দেখা গেছে, শিশুরা সকাল থেকেই নিজের পরিস্কার জামা-কাপড় পরে সেজেগুজে শিবিরের রাস্তায় হৈহুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে। কিশোরীরাও নিজেদের সাজানোর চেষ্টা করেছেন মনের মতো করে। আবার অনেক শিশুকে খালি গায়ে দেখা গেছে।
তবে বড়দের ঈদ উৎসবের আমেজ নেই। তাদের মনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে প্রাণ হারানো স্বজনদের দুঃসহ স্মৃতি!
কক্সবাজারের ৩০টি রোহিঙ্গা শিবিরে এক হাজার ২০০টি মসজিদ ও ৬৪২টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭টি, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৬২টি ও ২৮টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এসব মসজিদ ও নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের জামায়াত আদায় করেছেন মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা। কিছু কিছু জায়গায় খোলা আকাশের নিচে নামাজ পড়তে দেখা গেছে।
রোহিঙ্গা মুসল্লিরা বলেন, আগস্ট মাস রোহিঙ্গাদের জন্যা কালো, এ মাসে খুব কাছ থেকে দেখেছি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস রূপ। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে চোখের সামনেই সেনারা ছেলে, মেয়ে, ভাই, স্ত্রী, বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘরবাড়ি। লুট করা হয় সহায় সম্বল।
টেকনাফ লেদা ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারিনি। কারণ সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য আমাদের কোনো আনন্দ নেই। তাছাড়া তার শিবিরের লোকজন কোরবানি পশু পায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সব রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরে সাড়ে তিন হাজার কোরবানির পশু জবাই করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বণ্টন করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টে সেনা নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন