সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় এখনো ৪৩টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ
দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষ সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের সম্বল হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যায়। প্রতিবছর একেক সময় একেক রকম দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। কখনো ঝড়, কখনো নদীর বেড়ি বাঁধ ভেঙে পানিতে প্লাবিত হয়। আবার কখনো বন্যায় প্লাবিত হয়। সম্প্রতি সব চেয়ে বড় দুর্যোগ বলে মনে করেন নদী ভাঙন। এ নদী ভাঙন যেন উপকূলের মানুষের পিছু ছাড়ছে না। তবে নদী ভাঙনের জন্য সরকারি অবস্থাপনাকে দায়ী করেন উপকূলের মানুষ।
গত বছর আম্পান ঝড়ের পরে উপকূলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার উপর আবার বড় ধারণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার পূর্বাভাস শোনা যাচ্ছে। যদি এ ইয়াস নামের ঝড় এলাকা দিয়ে বয়ে যায় তাহলে উপকূলের মানুষের চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। উপকূলের মানুষের এ ধরনের দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হল টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মাণ।
কিন্তু আম্পানের পরে এলাকায় বেড়িবাঁধের ৪৩টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। খুব দ্রুত যদি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর সংস্কার কাজ না করা যায়, তাহলে যে ঝড় আসছে তাতে আবারো উপকূলের মানুষ তাদের সর্বস্ব হারাবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার মুন্সীগঞ্জে ৭টি, বুড়িগোয়ালীনিতে ৮টি, গাবুরায় ১৪টি, পদ্মপকুরে ৮টি, কাশিমাড়িতে ৩টি, ও আটুলিয়ায় ৩টি পয়েন্ট রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ বড় ভেটখালী গ্রামের সাইফুল ও রবি সরদার বলেন, আম্পানের সময় বড় ভেটখালির গোড়া ভাঙন দেখা দেয়। তারপরে সেটা ঠিক করা হয়নি। সামনে যে ঝড় আসছে সে ঝড়ের আগে যদি এ পয়েন্টে কাজ করা না হয় তাহলে বাঁধ ভেঙে যাবে। ক্ষতি হবে এলাকার হাজার হাজার বিঘার জমির মৎস্য সম্পদ।
হরিনগর সিংহড়তলী গ্রামের বিশ্বজিত রায় বলেন, আম্পানের পরে সিংহড়তলীর ভাঙন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোডের্র লোকদের বলার পরেও তারা কাজ করেনি। সামনে যে যস ঝড় আসছে সে ভয়ে আতঙ্কে আছি। যদি বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে আমারদের সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
বুড়িগোয়ালীনির দূর্গাবাটি গ্রামের দিনেশ মন্ডল ও রতি রাণী বলেন, আম্পানের সময় বাঁধ ভেঙে ঘর বাড়ি সব পানি উঠে গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে। আবার শুনছি নতুন করে যস নামের ঝড় আসবে। আমাদের ওয়াপদার রাস্তাগুলো ঠিক করে দিলে আর পানিতে ভাসতাম না। এবার যদি পানি ঢোকে তাহলে কোথায় যাব?
মুন্সীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, মুন্সীগঞ্জে ৭টি পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমি বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলার পরেও তারা কাজ করছে না। সামনে যশ নামের যে ঝড় আসছে এই ঝড়ে অনেক জায়গা ভাঙার আশঙ্কা আছে।
জেলা পরিষদের সদস্য ডালিম ঘরামী বলেন, আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতে আবার যশ নামের ঝড়ের পূর্বাভাস শোনা যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা নদী বেষ্ঠিত। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবঁাধের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। সরকারি মহল থেকে বাবার আশ্বাস প্রধান করলেও তা বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় না। যে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আতঙ্কিত থাকি।
বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, আমার ইউনিয়নে ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট আছে। কিছু কিছু পয়েন্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কাজ করেছে। যশ ঝড়ের জন্য আমাদের পরিষদ কিছুটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজার গিফারী বলেন, যশ ঝড়ের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাকি স্থানগুলোর জন্য সব সময় খোঁজ নিচ্ছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন