খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ কর্মী হত্যার প্রতিবাদে আধাবেলা সড়ক অবরোধ ঘোষণা
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় সেনামদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুনকে(৫২) কে হত্যার প্রতিবাদে রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লংছড়ি উপজেলায় আধাবেলা (সকাল ৬টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)র গুইমারা শাখার চীফ কালেক্টর ও পরিচালক অংথোই মারমা ওরফে আগুন(৫২) নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলার গুইমারা ও রামগড়ের বিভিন্ন সড়কে মালবাহী ট্রাকে আগুন, সিএনজি ভাংচুর ও চালকদের মারধরের পর এবার নতুন করে কর্মসূচী ঘোষনা করেছে সংগঠনটি।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত সংগঠনটির প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ হতে নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এই অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে তিনি, অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে সকল যানবাহন মালিক-চালক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, অবরোধ চলাকালে জরুরী ফায়ার সার্ভিস, এ্যম্বুলেন্স ও শববাহী গাড়ি, জরুরী ঔষধ সরবরাহকারী ও সংবাদপত্র বহনকারী যান, সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত সাংবাদিকদের গাড়ি এই অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
এর আগে, গতকাল ২রা সেপ্টেম্বর সকাল পোনে ১০টার দিকে গুইমারা উপজেলার দেওয়ান পাড়া এলাকায় প্রতিপক্ষের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের গুইমারা শাখার সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন(৫২) নিহত হন। ঘটনাস্থলে ৫রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি পিস্তল, ম্যাগজিন ও কয়েক রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে।
নিহত অংথোই মারমা উপজেলার বুদং পাড়ার(যৌথ খামার) কংহ্লাউ মারমার ছেলে ও ওই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ সংগঠনটির গুইমারা ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি স্থানীয়দের কাছে গুইমারার ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ইউপিডিএফের একটি সূত্র নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সকালে ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা সাংগঠনিক কাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় দেওয়ান পাড়া নামক স্থানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ঘটনার পর পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
এরপর এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক গুইমারা ও রামগড়ের বিভিন্ন সড়কে মালবাহী ট্রাকে আগুন, সিএনজি ভাংচুর ও চালকদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করে রাখে ইউপিডিএফ। পরে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কের রামগড়স্থ ঢাকা কলোনী(দাতারাম পাড়া রাস্তার মাথা) এলাকায় হঠাৎ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ব্রয়লার মুরগীর খাদ্যবাহী একটি ট্রাকের চালক মো: কামরুল ইসলাম(৩৪)কে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেদড়ক মারধরের পর গাড়িয়ে অগ্নি সংযোগ করে ইউপিডিএফ’র কর্মী সজল ত্রিপুরা ও তার দলের ১৫-২০জন সদস্য। এসময় কর্মীদের মারধরে আহত হন গাড়ি চালক কামরুল। তিনি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার বাড়িডালাস্থ টেরি আইল গ্রামের বাসিন্দা।
তিনি জানান, উক্ত পোলট্রি খাদ্যবাহী গাড়িটি চট্টগ্রাম থেকে গুইমারা যাওয়ার পথে ঢাকা কলেনী এলাকায় আসলে ইউপিডিএফ মূল দলের ১৫/২০জন কর্মী গাড়িটির গতিরোধ করে গাড়ির চালককে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ইউপিডিএফ কর্মী সজল ত্রিপুরা গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এসময় রাস্তায় চালাচলকারী অন্যান্য গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় এবং এতে কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দ্রুত উক্ত স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। এরপরই উক্ত সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে রামগড় ব্যাটালিয়নের একটি টহল দল ও রামগড় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে এর আগেই ইউপিডিএফ কর্মীরা পালিয়ে যায়। আগুনে পোড়া গাড়িটির মালামালসহ আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে প্রায় একই সময়ে গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি ব্রিজের উপর সড়কে আগুন দিয়ে মালবাহী একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে ইউপিডিএফ কর্মীরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় তাদের তান্ডবে জোড়া ব্রিজের দুপাশে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার(২রা সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার সময় গুইমারার দেওয়ান পাড়া এলাকায় সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা আগুনকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু প্রশাসন হত্যাকারীদের গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। গুইমারা উপজেলায় আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিপক্ষের গুলিতে বন্দুকযুদ্ধে ইউপিডিএফ(প্রসিত গ্রæপ) আঞ্চলিক কমান্ডার অংথুই মারমা ওরফে আগুন(৫২) নিহত হয়। শুক্রবার(২রা সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ৯টার দিকে গুইমারা উপজেলার দেওয়ান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)প্রসিত গ্রুপের কর্মী বলে জানা গেছে।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আব্দুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল নিশ্চিত করছেন। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ডেকেছি শুনেছি। অবরোধ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ঘটনার পর এলাকায় আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন