৮৬তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েও যেভাবে প্রাণে বেঁচে যান ওয়ালটন এভিনিউয়ের সেই তরুণী!
নাম তার এলভিটা অ্যাডামস, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস শহরের ওয়ালটন এভিনিউয়ের বাসিন্দা। ৪২ বছর আগে ডিসেম্বরের এক রাতে নিজেকে শেষ করে দিতে সেখানকার ১০২তলা বিশিষ্টা ‘এম্পায়ার স্টেট’ বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন তিনি। ৮৬তলা থেকে ঝাঁপও দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে প্রাণে বেঁচে যান ওই তরুণী। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হল?
আত্মহত্যা করতে ব্যর্থ হলেও রাতারাতি শিরোনামে জায়গা করে নেন এলভিটা অ্যাডামস। সংবাদমাধ্যমের দাবি, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর ২৯ বছরের এলভিটাই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন।
আত্মহত্যার পথ কেন বেছে নিয়েছিলেন এলভিটা? আমেরিকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে তখন অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এসব জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৭৯ সালের ২ ডিসেম্বরের রাতে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তখন মাস কয়েক হল চাকরি খুইয়েছেন এলভিটা। সরকারি অনুদানের সামান্য অর্থে সংসার চলত না। প্রতি মাসে ১০০ ডলারের ওয়েলফেয়ার চেক হাতে পেলেও তা যথেষ্ট নয়। ১০ বছরের শিশুপুত্রের মুখে অন্ন জোগাবেন কীভাবে, তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যান এলভিটা।
বাড়িভাড়া বাকি থাকায় প্রায়ই মালিকের হুমকি-ধমকি শুনতে হত এলভিটাকে। ভাড়া না মেটালে শিশুপুত্র-সহ তাকে বাড়িছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হতো। সংসারের অনটনে অবসাদে ডুবে যেতে শুরু করেছিলেন এলভিটা।
ডিসেম্বরের ওই শীতের সন্ধ্যায় হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে যান এলভিটা। ব্রঙ্কস থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কের মিডটাউন ম্যানহাটনের অভিজাত এলাকায়, যা প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টার পথ।
শনিবারের সেই সন্ধ্যায় এ রাস্তা-সে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এলভিটা গিয়ে পৌঁছান ‘এম্পায়ার স্টেট’ বিল্ডিংয়ের সামনে। এলোমেলোভাবে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ান বিল্ডিংয়ের প্রবেশদ্বারে।
সে রাতেই এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দেন এলভিটা। পরে অবশ্য তার দাবি ছিল, আলোয় ভরা ম্যানহাটনে দেখতেই ব্রঙ্কস থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। তার বিখ্যাত উক্তি ছিল, “কী সুন্দর (আলো)! আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলাম।” যদিও আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের পাল্টা দাবি, আত্মহত্যা করতেই ওই বিল্ডিংয়ের ৮৬তলায় উঠেছিলেন এলভিটা।
ম্যানহাটনের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে মোট ১০২তলা রয়েছে, উচ্চতায় যা ১,২৫০ ফুট। এর ৮৬তলায় রয়েছে অবজারভেটরি ডেক। যেখান থেকে ঝাঁপ দেন এলভিটা।
যদিও এলভিটাই প্রথম নন। ১৯৩১ সালের এই বিল্ডিং থেকে আরও ৩০ জন ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছিল। বস্তুত, ১৯৩১ সালে এই বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে এক ব্যক্তি এর ৫৮তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে আরও একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। এলভিটার মতোই ৮৬তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ইভলিন ম্যাকহেল নামে এক তরুণী। তবে তা ছিল ১৯৪৭ সালের ১ মে।
৫৮তলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড় করানো একটি লিমুজিনের ছাদে গিয়ে পড়েন ইভলিন। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় ওপার থেকে ছুটে এসে নিথর দেহটির ছবি তুলেছিলেন রবার্ট ওয়াইসল নামে ফটোগ্রাফির এক শিক্ষার্থী। লিমুজিনের উপর গ্লাভস ও মুক্তার মালা পরে যেন ঘুমিয়ে ছিলেন ইভলিন। আমেরিকার একটি নামজাদা পত্রিকা একে ‘সবচেয়ে সুন্দর আত্মহত্যা’ বলে তকমা দিয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সে ছবিতে মোহিত হয়েছিলেন অনেকে।
ইভলিনের মতো খ্যাতি পেয়েছিলেন এলভিটাও। তবে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিয়ে একমাত্র মানুষ হিসেবে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার জন্য।
২ ডিসেম্বর, স্থানীয় সময় শনিবার রাত ৮টা নাগাদ এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের অবজারভেটরি ডেকে পৌঁছেছিলেন এলভিটা। এর আগেও সেখান থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন অনেকে। ফলে সেখানে ৮ ফুটের কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া ছিল।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, সাধারণত অবজারভেটরি ডেকে চারজন নিরাপত্তারক্ষী পাহারা দেন। তবে ঘটনার দিন নাকি সেখানে কেউ ছিলেন না। রক্ষীহীন ৮৬তলায় পৌঁছে ঝাঁপ দিয়েছিলেন এলভিটা। তারপর?
ঝাঁপ দিলেও একেবারে নীচে পড়েননি এলভিটা। তিনি গিয়ে পড়েন নীচের তলার অর্থাৎ ৮৫তলার একটি ৩ ফুটের কার্নিশের উপর। ২০ ফুট নীচের ওই কার্নিশে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন এলভিটা। তবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
এলভিটার গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন জর্জ রাইস নামে বিল্ডিংয়ের এক রক্ষী। তার নাম ছিল ফ্র্যাঙ্ক ক্লার্ক। এলভিটাকে উদ্ধার করে তিনি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন।
ঘটনাটিকে আশ্চর্যজনক বলে আখ্যা দিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, বাতাসের ধাক্কায় এলভিটা গিয়ে পড়েছিলেন নীচের তলার কার্নিশে। তবে তা কীভাবে সম্ভব? সে রাতে নাকি প্রতি ঘণ্টায় ৩৭ থেকে ৬১ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বইছিল। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, অত উঁচুতে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৭৭ কিলোমিটার পৌঁছতে পারে।
এলভিটা যে আত্মহত্যা করতেই এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন, পুলিশও সেই একই দাবি করেছিল। তাদের দাবি, সে কারণেই অবজারভেটরি ডেকের কাঁটাতারের বেড়া টপকেছিলেন এলভিটা।
ঘটনার পর হাসপাতালের বিছানায় কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে চোখ মেলেছিলেন এলভিটা। কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছিল তার। যদিও তখনও বুঝতে পারেননি, কীভাবে বেঁচে গেলেন তিনি?
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, হিস্টোরি অব ইয়েসটারডে, হিস্টোরি কালেকশন, ওপেরা নিউজ
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন