ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মেয়াদ-ব্যয় বেড়েছে, নকশা হয়নি

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ৪ বছর মেয়াদ আর ৬৫১ কোটি টাকা বাড়িয়েও লাভ হয়নি। জনগুরুত্বপূর্ণ এই মেগা প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষে বাড়তি মেয়াদে শুরু করে কাজ। এর আগে প্রথম মেয়াদে ৫ বছরেও কাজ শুরুই হয়নি।

সূত্র বলছে, সরকার ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। ২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনের শেষের দিকে। কিন্তু তারপরেই বাড়ায় ৪ বছর মেয়াদ। মেয়াদ বাড়ানোর পর গেল বছরের নভেম্বরে নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এখনো প্রণয়ন হয়নি নকশা।

কর্তৃপক্ষের দাবি, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঋণসংক্রান্ত জটিলতার কারণেই প্রকল্পে ধীরগতি।

সূত্র বলছে, ঢাকা-আশুলিয়া চার লেনের ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তি হয়। প্রকল্পটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রকল্পটির কাজ দেয়া হয়েছিল চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি)। এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য বাজেট ছিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। শর্ত ছিল মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮৫ শতাংশের টাকা দেবে চীন সরকার এবং ১৫ ভাগ ফান্ড থাকবে বাংলাদেশ সরকারের এক্সিম ব্যাংক থেকে।

চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম কিস্তি বাবদ ৩২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। যা প্রকল্প ব্যয়ের ১৫ শতাংশ। আর অক্টোবরে বাকি ৮৫ শতাংশ ১৭০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছিল চীনা সরকার।

ঋণচুক্তির জটিলতা নিরসনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মূল নকশা তৈরি করতে যৌথভাবে দুই কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়। ডিজাইন রিভিউ এবং সুপারভিশন কনসালটেন্টস হিসেবে নকশা রিভিউ এবং নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেনের টেকনিকা ওয়াই প্রয়োকটস ও দক্ষিণ কোরিয়ার ডিওএইচডব্লিউএ এবং বাংলাদেশের ডিডিসির মধ্যে।

২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল সিএমসিকে চিঠি দেয় ঢাকা আশু‌লিয়া মহাসড়‌কের কা‌জে নি‌য়ো‌জিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিপসা। যার অনুলিপি দেয়া হয় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে (বিবিএ) কে। এমনকি চুক্তি শুরু হওয়ার ৫ মাস পরেও (অক্টোবর ২০২২), সিএমসি এখনও অধিকাংশ নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি।

বিবিএ-তে পাঠানো তত্ত্বাবধান কোম্পানির চিঠি সূত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশকিছু সীমাবদ্ধতার অভিযোগ করে। বিশেষ করে,ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা। ড্রয়িংয়ে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত কারণ কিছু বিভাগে বা তাদের অংশে ধারা ১ ও ৩ ধারায় ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারতেন এবং বর্তমানে ডিজাইনের অভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের ধীরগতির কারণে কাজের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। যদিও তারা বাংলাদেশ সরকারের টাকার অবমূল্যায়নকে দুষছেন।

জানা গেছে, এই প্রকল্পের জন্য সিএমসি-কে নির্বাচন করা হলেও তারা আরও ৩ জন চীনা সাব-কন্ট্রাক্টরকে পুরো প্রকল্পটি সাবকন্ট্রাক্ট করেছে। যা চুক্তি বর্হিভূত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তিতে স্বাক্ষর করার এবং পেমেন্ট পাওয়ার ৫ বছরেরও বেশি সময় পরে সিএমসির উচিত অন্তত প্রকল্পের নকশার প্রণয়ন করা। যেহেতু এই প্রকল্পটি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি জি টু জি প্রকল্প। সেক্ষেত্রে চীনারা সিএমসি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করে তা নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত সিএমসি-কে পর্যবেক্ষণ করা এবং সময়সীমার বিষয়টি বিবিএর শুরু থেকেই খুব কঠোরভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চুক্তি হওয়া উচিত ছিল। সেই সাথে নজর রাখা উচিত ছিল যে, নিজেদের সিএমসি কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হতে না দেয়া।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল এবং ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করবে। এতে ৩০টি জেলার মানুষ দ্রুত ও সহজে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারবে।

প্রকল্পের আওতায় ১০.৮৩ কিলোমিটার র‍্যাম্প,১.৯৫ কিলোমিটার দুটি দীর্ঘ ফ্লাইওভার, ১৪.২৮ কিলোমিটার চার লেনের রাস্তা এবং এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে ১৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।