ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন

ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে গরু-মহিষের লাম্পি স্কিন ডিজিজ। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে আক্রান্ত হয়েছে শত শত গরু। চিকিৎসা করেও কোন লাভ হচ্ছে না। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে গরু। মঙ্গলবার ১৯ জুলাই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দুটি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে দুঃশ্চিতায় পড়েছেন কৃষকরা।

তবে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর বলছেন, বিশেষ টিম গঠন করে ছুটির দিন সহ প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্ত গরুকে চিকিৎসা দেয়া সহ রোগ প্রতিরোধে কাজ করছেন তারা।উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরেই এ উপজেলায় গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এর চরম আকার ধারণ করেছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। আক্রান্ত হয়েছে শত শত গরু। আক্রান্ত গরুকে চিকিৎসা দিয়েও তেমন ফল ফাওয়া যাচ্ছে না। আক্রান্ত হওয়ার ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে গরু। বড় গরুর থেকে ছোট আকারের গরু বেশি আকান্ত্র হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে বলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বৈরচুনা গ্রামের মহেন্দ্র নাথ রায়ের শাহিওয়াল জাতের একটি বকনা গাভী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। একই দিনে উপজেলার জাবরহাট হাসেম পাড়ার আব্দুস সাত্তারের একটি আড়িয়া গরুও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ওই এলাকার শফি জানান, গত দু’দিনে তার এলাকার মকলেসুরের একটি আড়িয়া ও রশিদের একটি আড়িয়া গরু মারা গেছে।উপজেলার দক্ষিণ মালঞ্চা গ্রামের নিপা রাণী জানান, তার দুটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে একটি মারা গেছে। অপরটির চিকিৎসা চলছে।আক্রান্ত গরুর শরীর গুটি গুটি হয়ে ফুলে যাচ্ছে। গরু কিছু খাচ্ছে না। এতে দুর্বল হয়ে মারা যাচ্ছে।
একই এলাকার শ্রী চন্দ্র রায় জানান, তাদের গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরুর এ রোগ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা করেও তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ৬/৭টি গরু মারা গেছে।

জাবরহাট এলাকার খামারি শফিউল্লাহ শফি জানান, তার খামারে বেশ কয়েকটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। তবে তেমন উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাছাড়াও উপলোর বিভিন্ন খামারে ও বাসা বাড়িতে গরুর এ রোগ দেখা দিয়েছে এবং অনেকের গরু মারা যাচ্ছে।

বিরহলী গ্রামের নসরতে খোদা জানান, বিরহলী সহ আশ পাশের কয়েকটি গ্রামে শত শত গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে গরু গুলোকে বাঁচানো যাচ্ছে না।এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করায় কৃষক ও খামারিরা চরম হতাশায় পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অনেকেই। তারা বলছেন, এ রোগ প্রতিরোধে উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল টিম গঠন করে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে উপজেলার প্রায় সব গরু মরে সাফ হয়ে যাবে। অনেককেই পথে বসতে হবে। এদিকে এ রোগে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা নিতে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে প্রতিদিনই ভীড় করছেন গরু মালিকরা। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা রঞ্জিত চন্দ্র সিংহ জানান, এ উপজেলায় প্রায় দুই লাখ গরু মহিষ রয়েছে। খামার রয়েছে ৭৫টি। বর্তমানে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। প্রতিদিনই তাদের দপ্তরে প্রায় অর্ধশত লোক চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত গরু তাদের কাছে নিয়ে আসছেন। তাদের পক্ষ থেকে ভ্যাটেইনারি টিম গঠন করে সরকারি ছুটির দিনেও চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ রোগের এখনো ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়নি। তাই যে সমস্ত এলাকায় এ রোগ ছড়ায়নি সেখানে গরুকে গুড ফক্স ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেহেতু মশা ও মাছির মাধ্যমে এ রোগ বেশি ছড়ায় এজন্য আক্রান্ত গরুকে মশারীর মধ্যে রাখার জন্য গরু মালিকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এ রোগ বিষয়ে সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে রোগের লক্ষন, করনীয় ও বিস্তার ঠেকাতে তাদের পক্ষ থেকে প্রচার পত্র বিতরণ করা হচ্ছে।