গুম জীবনের ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক কাজল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময় ৫৩ দিন নিখোঁজ ছিলেন ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। দীর্ঘদিন পর গুম জীবনের ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিলে তিনি।
কাজল বলেন, গুমের জীবনে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, আবার কখনো বিকট শব্দের মাধ্যমে, কখনো নগ্ন করে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি নামাজরত অবস্থায় বেদম মারধরেরও শিকার হতাম। নির্যাতনের একেকটি গল্প যেন ছাড়িয়ে যায় আরেকটিকে।
তিনি বলেন, দু-একটি নয়, নির্যাতনের এমন অনেক সেল রয়েছে আয়নাঘরে।
শফিকুল ইসলাম কাজল আরও বলেন, আমাকে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে মাথা উঁচু করে রাখা যেত না। কোনো দিকে ঘুরে দাঁড়ানো যেত না। আমাকে উলঙ্গ করে রাখা হয়েছে। রুমে সাউন্ড টর্চার করা হয়। ভয়ংকর শব্দ হত, যেন কানের পর্দা ফেটে যায়। হঠাৎ একদিন শুনি রোজার মাস চলছে। পরে ওজু ছাড়াই নামাজ পড়ি। এসময় হাতকড়া পরানো ছিল, চোখ বাধা ছিল ফলে সেজদাহ দিতে গিয়ে পড়ে যাই। তখন শব্দ হয়। এর পর কয়েকজন এসে আমাকে মারল।
২০২০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে থেকে গুম করা হয় সাংবাদিক কাজলকে। তার পর জম টুপি পড়িয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মাটির নিচের কোনো অজ্ঞাত স্থানে।
ফটো সাংবাদিক কাজল বলেন, আমার স্ত্রীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কল করে বলেছিলেন- আপনার স্বামী অনেকের বিরুদ্ধে চলে গেছে। আমি সবাইকে ম্যানেজ করতে পেরেছি কিন্তু মেহেরপুরের প্রতিমন্ত্রীর কাছে আপনি মাফ চান।
বনিক বার্তা ও দৈনিক খবরের কাগজে ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন কাজল। সম্পাদনা করতেন একটি পক্ষকাল নামে একটি ম্যাগাজিন। তবে বিগত সরকারের নানা অনিয়ম নিয়ে নিয়মিত লিখতেন সামাজিকমাধ্যমে। বিশেষ করে পাপিয়া কেলেঙ্কারিতে জড়িত কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির তথ্য ও ছবি প্রকাশ করে সরকারের রোষানলে পড়েন কাজল।
কাজল বলেন, যৌন কেলেঙ্কারি একটি তালিকা আমি প্রকাশ করি। তালিকায় নাম ছিল ৩৪ জনের মত। নূর আলী নামে একজন তার হোটেলে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য উদ্ধারের জন্য অনেককেই আশ্রয় দেয় সেখানে। ধীরে ধীরে এর গভীরে গিয়ে দেখি এখানে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিরাও যাতায়াত করেন।
এদিকে বিভীষিকাময় ৫৩ দিন পর সাংবাদিক কাজলকে ২০২০ সালের ৩ মে রাতে ফেলে রাখা হয়েছিল যশোরের বেনাপোলের একটি খালে। তার পর আওয়ামী লীগের এমপি সাইফুজ্জামান শেখরসহ আরও দুইজনের করা ৩টি ডিজিটাল নিরাপত্তায় করা মামলায় কারাগারে থাকেন। পরে হাইকোর্ট থেকে ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর জামিন নিয়ে মুক্ত হন কাজল। জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা শঙ্কায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
সাংবাদিক কাজল জানান, নির্যাতনে রক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শরীরে বাসা বেঁধেছে গ্যাংগ্রিন রোগ। তাই কাটা পড়তে পারে একটি পা। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ ও শেখ হাসিনাসহ দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাষ্ট্রের সহযোগিতা চান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন