ট্রাম্প-কিমের মাঝে আটকা পড়েছেন মুন!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা-ইন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। এ আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমাণু কর্মসূচী থেকে উত্তর কোরিয়াকে বিরত রাখা। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বর্তমানে তিন দিনের সফরে উত্তর কোরিয়ায় অবস্থান করছেন।

গত এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত তিনবার উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রেসিডেন্ট।
তবে আগের দুই বৈঠকের চেয়ে তৃতীয় বৈঠকটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করার জন্য উত্তর কোরিয়াকে বোঝানোর বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে আলোচনায় অগ্রগতি করতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে দুই কোরিয়ার বৈঠক, ট্রাম্প এবং কিমের সাক্ষাৎ-এসব কিছু শুধু ফটো সেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

এক পর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলতে পারেন। নিজ দেশে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের পক্ষে জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনায় অগ্রগতি করতেই হবে।

গত জুন মাসে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে সিঙ্গাপুরে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড বলেন, উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে এখন আর পরমাণু হামলার আশংকা নেই। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু কর্মসূচী থেকে সরে আসবে না। উত্তর কোরিয়া এতো বছর ধরে তাদের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এখন তারা সেখান থেকে সরে আসবে কেন? উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এখন পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটি খুবই অস্পষ্ট। এর পরিবর্তন করতে হবে। গ্রিফিত এশিয়া ইন্সটিটিউটের আন্দ্রে আব্রাহামিয়ান বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, উত্তর কোরিয়াকে এ সপ্তাহে কিছু প্রতীকী কিংবা উল্লেখযোগ্য ছাড় দিতে হবে যাতে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের আগ্রহ বজায় থাকে।

মুন যদি আলোচনায় অগ্রগতি করতে পারেন তাহলে দেশের ভেতরে তার অবস্থান শক্ত হবে এবং আমেরিকার উপর চাপ বজায় রাখতে পারবে যাতে তারা সামনে এগিয়ে যায়। উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে চলতি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার যারা বৈঠক করেছিলেন, তাদের কাছে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে পরমাণু কর্মসূচী বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আলোচনার টেবিলে ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের জন্য। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া তাদের সর্বশেষ মিসাইল পরীক্ষা করেছিল ১০ মাস আগে। এটা এক ধরণের অগ্রগতি। কিন্তু স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, উত্তর কোরিয়া তাদের অস্ত্র মজুদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

জনসম্মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতার প্রশংসা করেছেন। ৯ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়ার সামরিক মহড়ায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনী না করায় কিম জং উনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জনসম্মুখে যাই বলুন না কেন, পরমাণু অস্ত্র বন্ধের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে ট্রাম্প প্রশাসন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রধান কাজ হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিম জং উনকে আলোচনার টেবিলে আবার বসানোর জন্য আগ্রহ ধরে রাখা। উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সেখানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করবেন।

তাছাড়া মুন জ্যা ইনের খালা এখনো উত্তর কোরিয়ায় বসবাস করেন। ২০০৪ সালে তার সাথে দেখা করেন মুন জ্যা-ইন। তাই উত্তর কোরিয়ার প্রতি তার মনে আলাদা একটি জায়গা রয়েছে।

পিয়ংইয়ং এবং ওয়াশিংটন পরস্পরের সঙ্গে ভিন্ন-ভিন্ন অবস্থান থেকে আলোচনা করছে। সেজন্য আলোচনা আটকে গেছে। উত্তর কোরিয়া চায় কোরিয়া যুদ্ধ শেষ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। দক্ষিণ কোরিয়াও সেটাই চায়। ১৯৫৩ সালে যুদ্ধ শেষ হলেও দু’দেশের মধ্যে কোন শান্তি চুক্তি হয়নি।

এপ্রিল মাসে এক বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুদ্ধ শেষ করার জন্য আনুষ্ঠানিক অঙ্গিকার-নামা স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ছিলনা। ওয়াশিংটন চায় কোন শান্তি চুক্তি করার আগে উত্তর কোরিয়া পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ করুক।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা-ইনের বাবা-মা কোরিয়া যুদ্ধ চলার সময় উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে এসেছেন।
সে সময় প্রায় এক লাখ মানুষ পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছিল। শরণার্থী ক্যাম্পে জন্ম হয়েছিল ভবিষ্যৎ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের।

মুন জ্যা-ইনের বাবা-মা চান মৃত্যুর পর তাদের জন্মভূমি উত্তর কোরিয়ার মাটিতে তাদের দাফন করা হোক। বাবা-মায়ের এ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার গুরু দায়িত্ব রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কাঁধে। এক সময় তারা ভাবতেন যে, কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়ার সাথে কথা বলা উচিত হবেনা কিংবা তাদের সাথে কথা বলা যায় না।

কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। উত্তর কোরিয়া ধীরে-ধীরে পাল্টাচ্ছে বলে মনে করেন প্রেসিডেন্টের মুনের বাবা। কিন্তু উত্তর কোরিয়া সত্যিকার অর্থে বদলাবে কি না সেটি নিয়ে তার মনে দ্বিধা রয়েছে। তবে তার ছেলে অন্তত মনেপ্রাণে সে চেষ্টাটাই করে যাচ্ছেন।