নেত্রকোনার ‘বাউল বাড়ি’তে শেষ শয্যায় বারী সিদ্দিকী

হাজারো মানুষের কান্না আর বিদায়ী ভালোবাসায় নিজের গড়া ‘বাউল বাড়িতে’ শেষ শয্যা নিলেন বহু কালজয়ী গানের গায়ক বারী সিদ্দিকী। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিজ গ্রাম নেত্রকোনার কালিগ্রামের বাউল বাড়িতে চতুর্থ জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে বেলা সাড়ে ৪টায় নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্পীর প্রথম ও দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার রাত দুইটায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর আগে স্কয়ার হাসপাতালে কয়েকদিন আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন বারী সিদ্দিকী।

বারী সিদ্দিকীর একাধিক জনপ্রিয় গানের গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী জানান: সন্ধ্যা ৬টায় হাজারো গ্রামবাসীর কান্না আর বিদায়ী ভালোবাসায় শেষ শয্যা নিয়েছেন প্রিয় বংশীবাদক ও শিল্পী।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা বারী সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ১৯ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই শিল্পী।

গুণী এই সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছোটবেলা থেকেই। ধ্রুপদ সঙ্গীতে তালিম নেয়া শুরু মাত্র ১২ বছর বয়সে। তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ গোপাল দত্ত, ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অনেক গুণীশিল্পীর সান্নিধ্যে থেকে। পরবর্তীকালে ভারতের পুনেতেও নব্বইয়ের দশকে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন।

১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ইমপ্রেসের অনুষ্ঠান ‘রঙের বাড়ই’ এর মাধ্যমে তাকে প্রথম গণমাধ্যমে পায় শ্রোতারা। তার আগে ১৯৯৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তার বাসায় বাঁশি শোনাতে গিয়ে প্রথম হুমায়ূনের নজরে আসেন বারী সিদ্দিকী। উকিল মুন্সীর গান ও মরমি গানে ছিল বারী সিদ্দিকীর অসাধারণ দখল।

১৯৯৯ সালে বছর হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে একাই সাতটি গান গেয়ে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীত নিয়ে কাজ করা বারী সিদ্দিকী।

তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’।