ফণীর তাণ্ডবে রাস্তায় উল্টে গেল বাস (ভিডিও)

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ১৭৫ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল শক্তি সঞ্চয়কারী এই ঝড়ের তাণ্ডবে ওড়িশায় অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওড়িশার পুরীতে আছড়ে পড়ে ফণী। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ফণী। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল দীর্ঘকায় টাওয়ার মুহূর্তের মধ্যে দুমড়ে-মুছড়ে পড়ছে। ফণীর তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছে মোবাইলের টাওয়ার। অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্রচণ্ড বাতাসে বাড়ির ছাদের অস্থায়ী ছাউনি উড়ে যাচ্ছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওড়িশার পুরীতে ঝড় ও বৃষ্টির চোটে ঘন অন্ধকার। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে জিনিসপত্র। একটি শহরের রাস্তায় দাঁড় করে রাখা বাস প্রবল বাতাসের ধাক্কায় উল্টে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

ওড়িশা পুলিশের টুইটারে টুইট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তারা ভেঙে পড়া গাছের ডাল টেনে সরিয়ে দিচ্ছেন। ইলেক্ট্রিক করাত দিয়ে গাছ কেটে সরানোর দৃশ্যও ক্যামেরাবন্দি হয়েছে ভুবনেশ্বর, পুরীর বিভিন্ন প্রান্তে।

ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার গতিতে হানা দেয় ফণী। ধীরে ধীরে তা কমে এখন পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সন্ধ্যায় পুরোমাত্রায় পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ঝড়। তার আগেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ফণীর প্রাথমিক তাণ্ডবের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ফণীর প্রাথমিক তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পশ্চিম মেদিনীপুর শহরের একাংশ তছনছ হয়ে পড়েছে। ২৪ পরগনায় তীব্র বাতাসের সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে একটি বাড়ি। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

জিনিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,পশ্চিমবঙ্গে দুপুরের পর থেকে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টি বইছে। এর মাঝে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুরে বেশ কিছু বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির নন্দকুমারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোহাম্মদ নগর গ্রামে কয়েকটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সকালের দিকে ওড়িশার স্থলভাগে ফণী আছড়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর রায়দিঘিতে শুরু হয় ঝড়।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফনি ভারতের ওড়িশা উপকূল পুরীর নিকট দিয়ে অতিক্রমরত। এটি বর্তমানে ওড়িশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে অবস্থান করছে।

খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে শুক্রবার মধ্যরাত নাগাদ। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আজ সকাল থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, ললক্ষ্মীপুর, ফেনী,চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা,পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি,বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ -৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস প্লাবিত হতে পারে।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকবে ফণী। সন্ধ্যার দিকে বাতাসের গতিবেগ নেমে আসতে পারে ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটারের নিচে।