‘মিশা ভাইও সেদিন বললেন আর কিচ্ছু চাইনা কাজ চাই’

‘আমি আমার দিক থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি কীভাবে ইন্ডাস্ট্রিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়। ভালো কাজের বিকল্প নেই। অনেক শিল্পীর হাতে কাজ নেই, তারাই আমার কাছে এসে বলছে, ভাই কাজ করতে চাই। আমাদের সুযোগ দিন। মিশা ভাইও সেদিন বললেন, কাজ করে যেতে চাই। আর কিচ্ছু চাইনা। আমি চেষ্টা করছি সহশিল্পীদের, পুরাতন পরিচালকদের কাজের সুযোগ করে দিতে। তাই নিজেই লগ্নি করছি।

মালেক আফসারি অনেক ভালো মানের নির্মাতা। তাকে আমার প্রডাকশনের ছবি করার সুযোগ দিলাম। সামনে বদিউল আলম খোকন একটা কাজ করবেন। সবকিছু ছাপিয়ে আমি কাজকে প্রাধান্য দেই। ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে চাই। অশ্লীল ছবির সময়ে প্রয়াত মান্না ভাই অনেক পরিশ্রম করে সুদিন এনেছিলেন। তারপর আবার কিছু অসাধু মানুষের জন্য সিনেমায় দুর্দিন আসে। এ অবস্থা থেকে বের করানোর জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বলছিলেন সুপারস্টার শাকিব খান।

চলিচ্চিত্রের দুর্দিনে নির্মাতা ও লগ্নিকারকদের সামনে আলোর মশাল জাগানিয়া কাণ্ডারি শাকিব খান। দেশিয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে আলোচিত এই নায়ক এক যুগের বেশি সময় ধরে ইন্ডাস্ট্রি শাসন করছেন। জনপ্রিয়তায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। নতুন করে আবার নিজেকে শৃঙ্ক্ষলার মধ্যে আনছেন শাকিব খান।

শাকিব খান বলেন, ‘আর অগোছালো ভাবে কাজ করবো না। যে কাজই (সিনেমা) করবো ব্যারিস্টারের মাধ্যমে লিখিতভাবে সিস্টেমের মধ্যে কাজ করবো। ছবি হাতে নিলে সেখানে ঠিক করা থাকবে মুক্তির তারিখ। এতে করে প্রযোজক বা কেউই কমিটমেন্টে নড়চড় করতে পারবে না। মুক্তির টার্গেট অনুযায়ি কাজ হবে। ইন্ডিয়ান বড় বড় শিল্পীসহ সারাবিশ্বের সুপারস্টাররা এই বিষয়টা খুব মেনে কাজ করে। কলকাতায় আমি যে ক’টা কাজ করেছি, সবগুলো এই সিস্টেম মেনে করেছি।’

তিনি বলেন, ‘পুরো প্রফেশনালিজম ব্যাপারটা থাকবে। ‘পাসওয়ার্ড’-এ ঠিক এই কাজ করছি। ঈদ টার্গেট করে এ ছবিটা করছি। আমরা এসব সিস্টেমের ধার ধারতে চাইনা। ইন্ডাস্ট্রি পিছিয়ে যাওয়ার অন্যতম একটা কারণ এটি। আমি এখন থেকে নতুন এই সিস্টেমে কাজ করবো। সেখানে আমার শিডিউল, শুটিংয়ের মাস্টারপ্ল্যান, মুক্তির তারিখ সবকিছুই থাকবে। ‘শাহেনশাহ’-তে যদি এই সিস্টেম থাকতো, তাহলে কেউ মুক্তি পেছাতো পারতো?

এরপর তিনি বলেন, ‘নোলক’ বৈশাখকে টার্গেট করে শুরু করা হয়েছিল। এমনকি নবান্নের একটা গানও ছিল। কিন্তু পরিচালক-প্রযোজকের হ্যাসেলের কারণে ছবি এখনো মুক্তিই পেল না। ইন্ডিয়ায় সবার একসঙ্গে যেভাবে পেশাদারিত্বে জোর দিয়ে কাজ করেছি, এখানেও সেভাবে করবো। ব্যারিস্টার দিয়ে ডিড-ডকুমেন্টস করানো থাকবে।’

‘শাহেনশাহ’ মুক্তির ঘোষণা এলেও প্রযোজকের ইচ্ছেয় শাকিব খানের একাধিক ছবি পিছিয়ে ছবি মুক্তির তারিখ বদল হয়েছে। ভালোবাসা দিবস পরিবর্তন করে ২২ মার্চ ‘শাহেনশাহ’ মুক্তি পাবে শোনা গেলেও আবার পেছানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অ-পেশাদারিত্বের অভাব ও প্রযোজকের খামখেয়ালিপনার কারণে এমনটা হয় বলে মনে করেন চলচ্চিত্রের মানুষজন। এতে করে ছবি নিয়ে আগ্রহী দর্শকরাও বিরক্ত ও বিভ্রান্ত হন। সবদিক বিবেচনা করে এমন নতুন ছবি করার আগে এখন থেকে ‘লিখিতভাবে সিস্টেম’-এর মধ্যে থাকবেন বলে জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান।

তার অভিনীত মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘শাহেনশাহ’ নিয়ে তৈরী হয়েছে এই জটিলতা। এই ছবির প্রযোজক চাইছেন তিনি আসছে ঈদে মুক্তি দেবেন। এদিকে একই অভিনেতার ‘পাসওয়ার্ড’-ও ঈদকে টার্গেট করে নির্মিত হচ্ছে। একসঙ্গে বড় আয়োজনের দুই ছবির মুক্তি সাংঘার্ষিক হবে কিনা জানতে চাইলে শাকিব খান বিষয়টিকে ‘থোড়াই কেয়ার’ করলেন।

বললেন, একদম কিছুই হবেনা। ‘পাসওয়ার্ড’ ঈদের ছবি। ঈদে শাহেনশাহ, নোলক এগুলো রিলিজ দিতেও পারে! আমি সবকিছু বিশ্লেষণ করেই তো কাজ করেছি। এতে ‘পাসওয়ার্ড’-এর কিছুই আসবে যাবে না। ঈদে ‘শিকারী’র সঙ্গে ‘মেন্টাল’, ‘সম্রাট’ এই দুটো ছবি এসেছিল।’

তিনি আরো বলেন, তখন ‘শিকারী’র সঙ্গে ঈদে এই দুটো ছবি আসতে বারণ করেছিলাম। কারণ, আমি বুঝেছিলাম ‘শিকারী’র ওজন কত ছিল। শোনেনি, পরে টের পেয়েছিল। ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটিও তেমন হবে। জাস্ট পাগল করে দিবে সবাইকে। কলকাতার ছবির মানের থেকে ‘পাসওয়ার্ড’ কোনো অংশে কম নয়, বরং বেশি। ছবি দেখলে সবাই বুঝতে পারবে। ২০১৯ সালের সিনেমা যেমন হওয়া উচিত ‘পাসওয়ার্ড’ তেমনই হচ্ছে। আর দিনশেষে যেটা ভালো ছবি, ঈদের ছবি হিসেবে সেটাই দর্শক দেখবে।

এদিকে, নিকট অতীতে দেখা গেছে, চলচ্চিত্রের মানুষদের মধ্যে কোন্দল, রেষারেষি। এ অবস্থায় দিন দিন ছবি নির্মাণ কমে যাচ্ছে। অনেক নির্মাতা ও শিল্পী যেখানে বেকার হয়ে বসে আছেন। অবস্থার উত্তরণ না হলে শেষ হয়ে যাবে চলচ্চিত্র! সেজন্য সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজের কথা ভাবছেন চলচ্চিত্রের প্রভাবশালী নায়ক শাকিব খান। সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন