রক্তাক্ত সিরিয়ায় জীবনের অর্থ খুঁজে পান এক অভিনব ‘ক্যাটম্যান’

গৃহযুদ্ধ ও জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত সিরিয়া৷ এখানকার রক্তাক্ত ছবি দেখে শিহরিত হয় দুনিয়া৷ তারও মাঝে উঠে এসেছে এমনই এক মানুষের কথা, যিনি আক্ষরিক অর্থেই অন্যরকম৷

প্রবল সংঘর্ষের মধ্যে সিরিয়ার বহু এলাকা যখন জনশূন্য, ভগ্নস্তূপে পরিণত সেখানেই তিনি খুঁজে বেড়ান অবলাদের৷ তাদের জন্য জীবন বিপন্ন করেন৷ মানুষ যেখানে নিজেই অসহায়, সেখানে তার পোষ্যের খেয়াল রাখা অর্থহীন৷ আর এতেই জীবনের অর্থ খুঁজে পান ‘ক্যাটম্যান’৷

সিরিয়াতেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিড়ালদের উদ্ধার করে যাচ্ছেন মোহম্মদ আলা আল জালিল৷ আলেপ্পোর কাফর নাহা অঞ্চলে তিনি তার ক্লিনিকে বেড়ালদের সেবা করেন৷ জালিলের ক্লিনিকে বিনামূল্যে অনেক পশুরই চিকিৎসা করা হয়৷ তার মধ্যে ঘোড়া, গরু এবং মুরগিও আছে৷ এক বছরে তারা ৭ হাজার পশুর চিকিৎসা করেছেন৷

আবার ৪৩ বছরের জালিল ‘আর্নেস্টোস ক্যাট স্যাংচুয়ারি’ নামে বিড়ালদের একটি সেবাকেন্দ্র চালান৷ এখানে অসুস্থ এবং দুর্বল প্রাণীদের চিকিৎসা হয়৷ নেহাত ভালোবাসা থেকেই তিনি এই স্বেচ্ছাশ্রম দেন৷

বিড়ালের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে৷ যুদ্ধ শুরুর সময় যখন সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল, তিনি ১৭০ টা বিড়ালকে ছেড়ে পালাতে পারেননি৷ সেই সবাই তাকে আলেপ্পোর ‘ক্যাটম্যান’ বলে চেনে৷ এই ক্যাটম্যানের অনেক ভক্তও জুটেছে৷

সিরিয়ার যুদ্ধে অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ ৩ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ বহু মানুষ গৃহহারা৷ একই অবস্থা গৃহপালিত বিভিন্ন প্রানীর৷ এদের জন্যই জালিল তার সেবাকেন্দ্রটি খুলেছেন৷ প্রথমে তিনি একটি অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র চালাতেন৷ পরে বন্ধুরা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক শুভানুধ্যায়ী মিলে টাকা জোগাড় করে এই ‘ক্যাট স্যাংচুয়ারি’ গঠন করেছেন৷

সিরিয়ায় যুদ্ধের যা অবস্থা, তাতে এখনও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে৷ জালিলের চিকিৎসাকেন্দ্রের দেয়ালে রয়েছে গুলির চিহ্ন৷ এখানে যুদ্ধে পীড়িত পশুদের সেবা করেন পশু চিকিৎসক মহম্মদ ইউসুফ৷

তিনি জানালেন, “যেভাবে যুদ্ধে মানুষের ক্ষতি হয়, একইরকম পশুদেরও ক্ষতি হয়৷ আমরা একটা লাগাতার যুদ্ধ লেগে থাকা এলাকায় থাকি৷ তাই আমাদের সব ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই৷ ফলে সব পশুই এখানে চিকিৎসা পাচ্ছে না৷”