সদ্যবিবাহিতা নারীদের জন্য কিছু পরামর্শ!

ভবিষ্যৎ সংসার জীবনটা কেমন ভাবে সাজাতে চান, প্রথম থেকেই নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করে নেওয়া ভালো। এখানে থাকলো সদ্যবিবাহিতা নারীদের জন্য কিছু পরামর্শ, কি করবেন ঠিক বিয়ের পরপর:

১। বিয়ের প্রথম ২/৩ দিন মানে, বিয়ে, বৌভাত, এরপর আবার বাবার বাড়ি আসা। এ কয়দিন আসলে আপনার নিজের তেমন বেশী কিছু করার নেই। নতুন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে টুকটাক সৌজন্যমূলক কথা বলা, বড়দের সালাম দেয়া, দুলাভাই বা দেবর জাতীয় মানুষদের কাছ থেকে কিছু খুনসুটি হাসি মুখেই হজম করা এই তো।

২। তিনদিন পরে যখন সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ, শ্বশুরবাড়িতে আছেন, তখন অনেক নতুন বৌকে দেখা যায় খুব সংসারীপনা দেখাতে নিজে থেকেই রান্না ঘরে যায়, এটা সেটা রান্না করে সবাইকে চমক এবং খুশী করাতে চায়, অন্যান্য গৃহস্থালীর কাজও কাজের মেয়েদের সাথে সাথে করতে চায়। আমি বলবো, না। চট্‌ করে নিজে থেকে রান্নাঘরে ঢুকবেন না, যদি না কেউ অনুরোধ করে।

বরঞ্চ খাবার টেবিলে সবাইকে কিছু পরিবেশনের কাজ করতে পারেন। বিকেলে হয়তো চা রেডী করতে পারেন, মানে হালকা কিছু। তারচেয়ে বেশী বুদ্ধিমানের কাজ হবে বাড়ির সবাইকে গল্পের ফাঁকে পর্যবেক্ষণ করবেন। ঐ পরিবারে মেয়েদের অবস্থান কেমন, বাড়িতে কে কি কাজ করছে, কিভাবে করছে, মাছটা কিভাবে কাটছে, তরকারী রান্নার স্টাইলতা কেমন, আপনার বাবার বাড়ীর সাথে মিলে নাকি অন্যরকম, আত্মীয়-স্বজন কার সাথে কেমন আচরণ করা হচ্ছে।

মূলত এগুলো খেয়াল করবেন।আপনি আগে থেকে যতই কাজ জানেন না কেন, সাধারণতঃ তারা তাদের রুচিকেই মূলতঃ প্রাধান্য দিবে, আর তারা সংখ্যায় অধিক। এছাড়া, যদি আপনার শ্বশুরবাড়ি ভাগ্য খারাপ হয়, তাহলে আপনার অতি আগ্রহ হিতে বিপরীত হতে পারে, দেখা যাবে কয়েকদিন পর এমন কাজের চাপ দিচ্ছে যে আর সামাল দিতে পারছেন না। তাই রয়ে সয়ে।

৩। স্বামীর সাথে গল্প করার সময় বাড়ির সদস্যদের সম্পর্কে, তাদের মন-মানসিকতা সম্পর্কে অল্প অল্প জেনে নিন (এ ব্যাপারে আপনার স্বামীরই নিজ উদ্যোগে সাহায্য করা দরকার যে কার সাথে কেমন কথা বলতে হবে, কে কি পছন্দ করে বা করে না, কার কথার স্টাইল কেমন), বাকীটা আপনি নিজ বুদ্ধিতে বুঝে নিন।

৪। বিয়ের পরই অনেক সময়ে অনেকের হানিমুন যাবার প্ল্যান থাকে, এ ব্যাপারে আপনার স্বামীর সামর্থ্য সম্বন্ধে নিশ্চয় আপনি ওয়াকিবহাল। অতএব, স্বামীর সামর্থ্যের বাইরে তাকে অযথা অনুরোধ করবেন না, এতে করে নতুন সম্পর্কে প্রথমেই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অবতারণা হতে পারে, যা কারো জন্যই ভাল নয়। তবে আপনি চাকুরীজীবি হলে এবং সামর্থ্যবান হলে আর্থিক ব্যাপারে স্বামীর সাথে শেয়ার করতে পারেন।

৫। নতুন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে একটা ভাল সম্পর্ক তৈরী করা অবশ্যই জরুরী, সেটা করতে সচেষ্টও হবেন। তবে হ্যাঁ, তার মানে এই নয় আপনার স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির লোকজন যা বলছে ভুল কি শুদ্ধ, যে আচরণ করছে ভুল কি শুদ্ধ সব আপনি বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিবেন। অনেক বিয়েতেই দেখা যায় পারিবারিকভাবে ছোটখাট কিছু না কিছু ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

তখন দেখা যায় স্বামী বা স্বামীর আত্মীয়-স্বজন নতুন বৌটিকেই বিভিন্নরকমভাবে, নানারকম কথা শুনিয়ে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করে, এমনকি অনেক সময় বাবা-মাকে অপমান করেও কথা বলে। তাই, এ ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো শুরু থেকেই প্রতিবাদ করবেন। কোন ভুল কথা বলা হলে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে দিবেন, নতুন বলে চুপ করে সব শুনে থাকবেন না, কোন অন্যায়ের ব্যাপারে প্রথম থেকে বলিষ্ঠ হবেন।

ভীরুতা প্রদর্শন করবেন না। তারমানে আবার এই নয় যে খুব চিল্লাচিল্লি, ঝগড়া-ঝাটি শুরু করবেন, আপনিও তাদেরকে অপমান করবেন। সেটাও সমানভাবে খারাপ। স্বামীকে আপনার বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলুন। নিজেও তার বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।

৬। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসার পাশাপাশি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধও গড়ে তুলবেন। নতুন সম্পর্ক হয়েছে বলে খুব প্রেমে মজে থেকে স্বামীর সব কথায়, সব অনুরোধে জ্বী হ্যাঁ, জ্বী হ্যাঁ করবেন, এটা ঠিক নয়। নিজের বিবেচনাবোধকে প্রথম থেকেই কাজে লাগাবেন।

স্বামীর ভালকে ভাল, খারাপকে খারাপ বলার প্র্যাকটিস প্রথম থেকেই করবেন, সর্বোপরি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হবেন। স্বামীকে বোঝার চেষ্টা করবেন। কিছু মেয়ে আছে স্বামীর সামর্থ্য জেনেও অযথা জব্দ করার অজুহাতে স্বামীকে খোঁচা মেরে কথা বলেন, যেটা অবশ্যই উচিত নয়। তবে স্বামীর ইচ্ছাকৃত অবহেলাকেও প্রশ্রয় দেয়ার কিছু নেই। অযথা নমনীয়তা প্রদর্শন করবেন না।

৭। শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর সাথে বা আর কারো সাথে অল্প-বিস্তর মনোমালিন্য হলে সেটা বাবার বাড়ির কারো সাথে শেয়ার না করাই ভাল। যতটা সম্ভব নিজেই সেটা মিনিমাইজ করার চেষ্টা করবেন। যার যার প্রাইভেসী রক্ষা করবেন। অনেক সময়ে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করলে বাবা-মাকে অনেক কিছু বলাও যায় না, ছোট হবার ভয় থাকে। তবে খুব বড় রকমের সমস্যা হলে সাথে সাথেই বাবা-মার সাথে শেয়ার করবেন।

৮। নিজের জীবনের ব্যাপারে, ক্যারিয়ারের ব্যাপারে যেকোন সিদ্ধান্ত নিজেই নিবেন, স্বামীর সাথে পরামর্শ করবেন, স্বামীকেও তার কাজে পরামর্শ দিবেন, তবে যার যার সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে দিবেন, অযথা কেউ কারো প্রতি জোরাজুরি করবেন না। মনে রাখবেন নিজের সত্তা নিজের অধীন, আর কোন মানুষের অধীন নয়। জোর করে কখনো ভালোবাসা বা মনোযোগ বা অতিরিক্ত যত্ন আদায় করা যায় না।

স্বামীর সাথে এমন একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে, যাতে করে খুব সহজেই মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পারেন। তবে যদি মনে হয় আপনার স্বামী খোলামেলা হতে চাচ্ছেন না, তাহলে ব্যডলাক। আপনিও তখন নিজেকে খোলামেলা করবেন না, এতে করে আপনার স্বামীর কাছে ছোটই হবেন, চটুলই হবেন। সমস্যা, জটিলতা এগুলো বাড়বে বৈ কমবে না।

লেখা : ব্লগার নাজনীন।