করোনা ও উপসর্গ

অক্সিজেন সংকটে সাতক্ষীরা মেডিকেলে ২ ঘন্টায় ৭ রোগীর মৃত্যু!

করোনা চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংকটে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ৭ রোগী মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় পর এই বিপর্যয়ে তারা মারা যান বলে একাধিক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে সাত জনের মারা যাওয়ার কথা জানা যায়।

তারা হলেন– আইসিইউ ইউনিটে করোনা পজিটিভ রোগী কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আকরাম হোসেন খান (৬৩), সিসিইউ ইউনিটে শহরের ইটাগাছা এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী খাইরুন নেছা (৪০), শহরের কুকরালী আমতলা এলাকার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নাজমা খাতুন, শ্যামনগরের সোনাখালি এলাকার কাশেম গাজীর ছেলে আশরাফ হোসেন, সাধারণ ওয়ার্ডে শ্রীউলা ইউনিয়নের বক্সার গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ (৫৪), কালিগঞ্জের জগন্নাথপুর এলাকার সৈয়দ আলি পাড়ের ছেলে আবু জাফর মো. শফিউল আলম তুহিন, আশাশুনির নৈকাটি এলাকর বেনু গাজির ছেলে আব্দুল হামিদ (৭৫)।

বুধবার রাত ৮টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় আইসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট স্বজনদের আহাজারিতে প্রকম্পিত হতে দেখা যায়। আইসিইউ ওয়ার্ডের সামনে রোগীর স্বজনদের হুড়োহুড়ি এবং কান্নার রোল পড়ে যায়।

আইসিইউ ইউনিটে মারা যাওয়া আকরাম হোসেন খানের ছেলে তাজ মুহাম্মদ খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা করোনা পজিটিভ ছিলেন। গত ৪৫ দিন ধরে এখানে ভর্তি ছিলেন। কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেয়নি। সেই কারণে আজ কতগুলো রোগী মারা গেলো! কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বাবাকে হারাতে হলো। সাড়ে ৬টা থেকে অক্সিজেন নেই। রাত ৮টায় অক্সিজেন এসেছে। এত সময় এই রোগীরা কীভাবে বাঁচবেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবা যখন মারা গেছে। তখন ফোন দিয়ে আমাদের ডাকছে। আগে থেকে আমাদের জানানো হলে বাবার সঙ্গে শেষ দেখা করতে পারতাম। এখানে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে না। আমার বাবাকে হারিয়েছি। ভবিষ্যতে এভাবে যেন আর কেউ তার বাবাকে না হারান, কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি।’

অপর রোগীর স্বজন শ্রীউলা ইউনিয়নের বক্সার গ্রামের আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আমার বড় ভাই রবিউল ইসলাম পারভেজকে ভর্তি করেছিলাম। অক্সিজেন সংকটের কারণে সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান। এখানে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

কলারোয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও ভর্তি থাকা এক রোগীর স্বজন গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘আমার স্ত্রী সিসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি। ওই ওয়ার্ডে অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে দুই জন মারা গেছেন। আমার স্ত্রীকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন! কেন এই বিপর্যয়? এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. মানস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘বিকাল থেকে হাসপাতালে অক্সিজেনের লেভেল কমে যায়। সকালে এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। যশোর থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসা হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে হাসপাতালে অক্সিজেনের অবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদাকে একাধিকার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

সিভিল সার্জন হুসাইন শাফায়েত বলেন, ‘মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দেওয়ার কথা না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়াও ৭০টির অধিক সিলিন্ডার আছে। তবে করোনায় চার জন মারা গেছেন। এখানে কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি ছিল কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন