আ.লীগের ২৩ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ বিএনপির

জামায়াত নেতাদের বিএনপি ধানের শীষে মনোনয়ন দেয়ায় নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা অভিযোগ তুলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদলগুলো। তাদের এ অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে বলে ২৩ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি।

অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগের এ ২৩ জন যুদ্ধাপরাধী বা তাদের পরিবার কোনো না কোনোভাবে ৭১ সালে পাকিস্তান সরকার ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

রোববার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ তালিকা প্রকাশ করেন।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের ২৩ জন যুদ্ধাপরাধী বা তাদের পরিবার কোনো না কোনোভাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এসব নেতা ঘৃণিত ভূমিকা পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতেতে সক্রিয় থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বনে গিয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এসব যুদ্বাপরাধীর নাম ও তাদের পরিবারের কর্মকাণ্ডের কিছু তথ্য দেয়া হলো:- এরমধ্যে ১. অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রাজাকার পরিবারের সদস্য। তার বড় ভাই হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম নেজামে ইসলামী পার্টির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ঢাকায় প্রথম তার নেতৃত্বেই শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে তিনি রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।

রিজভী বলেন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসই স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বড় ভাইকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার রাজাকার ভাইয়ের মালিকাধীন প্রিন্টিং প্রেসে তিনি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৬৯ সালে এ দেশে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন জোরদার হলে নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার প্রচারণা চালানোর জন্য ‘নেজামে ইসলাম’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। হাকিম অজিজুল ইসলাম এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানসহ পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনকারীদের নিয়ে তিনি এ পত্রিকায় ‘ইবলিশের দিনলিপি’ নামে প্রতি সপ্তাহে বিশেষ সম্পাদকীয় লিখেন। অ্যাডভোকেট কামরুল ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এর মধ্যেদিয়ে রাজাকার পরিবারের গন্ধ হতে মুক্ত হতে চান তিনি। তার ব্যাপারে ‘মুক্তিযুদ্ধে ইসলামী দল’ শীর্ষক বইয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে।

তালিকার দ্বিতীয়তে আছেন সরকারি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে.কর্ণেল (অব.) ফারুক খান। তিনি পর্যটন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহীনীর পক্ষে প্রথম অপারেশন চালান এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। সুত্র: ‘দিনাজপুরের মক্তিযুদ্ধ’ বই।

তালিকার তৃতীয়তে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। কথিত আছে-তিনি শান্তি বাহিনী গঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হানাদার বাহিনীকে প্ররোচিত করেন। ‘দৃশ্যপট একাত্তর: একুশ শতকের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ’ বইয়ের ৪৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন শান্তি কমিটির জাদরেল নেতা ছিলেন। তার পিতা নুরুল ইসলাম নুরু মিয়া ফরিদপুরের শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন।

চতুর্থ নম্বরে অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন। ময়মনসিংহ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে গত বছরের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসানের দেয়া যুদ্ধাপরাধের তালিকায় (ক্রমিক নং-৭৩) উল্লেখ করা হয়েছে। যা গত ২২ এপ্রিল দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গত ৬ এপ্রিল ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জোড়বাড়িয়া গ্রামের ওয়াহেদ আলী মন্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।

আছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড সংসদ উপনেতা ও ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর কাছে একজন আস্থাভাজন নেত্রী ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিতদের মধ্যে থেকে ৮৮ জনকে পাকিস্তানের সামরিক সরকার আস্থাভাজন এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল এজেন্সী) হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭১ সালের ৭ আগস্ট পাকিস্তানের তথ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই তালিকায় সাজেদা চৌধুরীর নাম ছিল ৮৪ নম্বরে। জেনারেল রোয়াদেদ খান ওই দিন ইসলামাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকা প্রকাশ করেন। পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন জানানো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করার সুবাদে তিনি এ খ্যাতি অর্জন করেন বলে জানা গেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে এ তথ্য উল্লেখ আছে বলেও জানান রিজভী।

তালিকার ৬ নম্বরে আছেন কাজী জাফর উল্লাহ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। মাসিক ‘সহজকথা’ আয়োজিত যুদ্ধাপরাধের বিচার: বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর ঊল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। জাফর উল্লাহ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পূর্ণ সমর্থন দেন। “মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান” বইয়ে জাফরউল্লাহ সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ আছে।

৭ নম্বরে আছেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরিদপুরের নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেন, শেখ সেলিম যে তার ছেলেকে ফরিদপুরের রাজাকার মুসা বিন শমসেরের মেয়েকে বিয়ে করিয়েছেন তার কথা কেউ বলছেন না কেন? এ খবর পরের দিন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, মুসা বিন শমসের গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলের শ্বশুর। ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এমএ হাসান যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ৩০৭ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। সেখানে ফরিদপুর জেলায় গণহত্যাকারী হিসেবে মুসা বিন শমসেরের নাম রয়েছে।

আছেন মির্জা গোলাম কাশেম। জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকার দলীয় হুইপ মির্জা গোলাম আযমের বাবা। ১৯৭১ সালে মির্জা কাশেম জামালপুরের মাদারগঞ্জে শান্তি কমিটির জাদরেল নেতা ছিলেন। তিনি রাজাকার, আল-বদরদের গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ছিল। যা “জামালপুরের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৮১ সালের সংস্বকরণ” বইয়ে উল্লেখ আছে।

আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান আছেন এ তালিকায়। রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক এইচএন আশিকুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের অধীনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে টাঙ্গাইলে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সরকারকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেন। এসএসএম শামছুল আরেফিন রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ব্যক্তির অবস্থান’ বইয়ের ৩৫০ পৃষ্ঠায় পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের তালিকায় তার নাম প্রকাশিত হয়েছে। ৯ জানুয়ারি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেন, রাজাকার আশিকুর রহমান আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ বলে তার বিচার করবেন না তা হয় না। আমরা সব রাজাকারের বিচার চাই। মন্ত্রিসভায় রাজাকার রেখে রাজাকারের বিচার করা যায় না।

আছেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। চাঁদপুর-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ময়মনসিংহে অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছেন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ সময় আরেফিন রচিত “মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান বইয়ের ৩৫০ পৃষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি অফিসারদের তালিকা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তাকে চিহ্নিত রাজাকার হিসেবে আখ্যা দিয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তার বিচার দাবি করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।

আলোচিত নুরু মাওলানা বা মাওলানা নুরুল ইসলাম। জামালপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মাওলানা নুরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে জামালপুর সরিষাবাড়ী এলাকার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তার নেতৃত্বে রাজাকাররা ওই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। “দৃশ্যপট একাত্তর: একুশ শতকের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ” গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠায় এর বিবরণ দেয়া আছে। এ ছাড়া গত ২৮ এপ্রিল দৈনিক আমাদের সময় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মাওলানা নুরুল ইসলামকে সরিষাবাড়ী এলাকার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মজিবর রহমান হাওলাদার। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান হাওলাদার সশস্ত্র রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। গোপালগঞ্জের কোটালীপড়ায় ইউনিট কমাণ্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় তার নাম ১ নম্বরে । এ তালিকা প্রকাশ করা হয় ২০০৮ সালের ১ আগস্ট। দ্বিতীয় বার গত ১ এপ্রিল যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সে তালিকাতেও যুদ্বাপরাধী হিসেব তার নাম আছে।

আবদুল বারেক হাওলাদার। গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগমের পিতা আবদুল বারেক হাওলাদার ‘৭১ এ দালাল ছিলেন। গোপালগঞ্জের কোটলীপাড়া ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্বাপরাধীর তালিকায় তার নাম ৪১ নম্বরে। এ তালিকা প্রকাশ করা হয় ২০০৮ সালের ১ আগস্ট। দ্বিতীয় বার গত ১ এপ্রিল যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সে তালিকাতেও তার নাম আছে।

আজিজুল হক। গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগমের ভাই আজিজুল হক কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় তার নাম ৪৯ নম্বরে। এ তালিকা প্রকাশ করা হয় ২০০৮ সালের ১ আগস্ট। দ্বিতীয় বার গত ১ এপ্রিল যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানেও তার নাম রয়েছে।

মালেক দাড়িয়া। আওয়ামী লীগ নেতা ও গোপালগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবুল কালাম দাড়িয়ার বাবা মালেক দাড়িয়া কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। তিনি ছিলেন আল বদরের একনিষ্ঠ সহযোগী। গণহত্যয় নেতৃত্ব দেন তিনি। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্বাপরাধীর তালিকায় তার নাম ১৪০ নম্বরে। তালিকা প্রকাশ করা হয় ২০০৮ সালের ১ আগস্ট।

মোহন মিয়া। গোপালগঞ্জ কোটালিপাড়া উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি আমির হোসেনের পিতা মোহন মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় তার নাম ছিল ১৫৭ নম্বরে।

মুন্সি রজ্জব আলী দাড়িয়া। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া দাড়িয়ার বাবা মুন্সি রজ্জব আলী দাড়িয়া রাজাকার ছিলেন। যুদ্বাপরাধীর তালিকায় তার নাম আছে। তিনি পাকিস্তানিদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের গোপন খবর পাক বাহিনীকে পৌঁছে দিতেন।

রেজাউল হাওলাদার। কোটালিপাড়া পৌর মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এইচএম অহেদুল ইসলামের ভগ্নিপতি রেজাউল হাওলাদের নাম ২০৩ নম্বর রাজাকার, আল বদর, আলশামসসহ গত ১ এপ্রিল প্রকাশিত কোটালিপাড়ার যুদ্বাপরাধীর তালিকায় রয়েছে। তিনি আল বদর সদস্য হিসেব স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।

বাহাদুর হাজরা। কোটালিপাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র এইচএম অহেদুল ইসলামের পিতা বাহাদুর হাজরার নাম গত ১ এপ্রিল প্রকাশিত কোটালিপাড়ার যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রয়েছে। তিনি একজন সক্রিয় রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন।

অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার। গোপালগঞ্জের এপিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. দেলোয়ার হোসেন সরদারের নাম গত ১ এপ্রিল প্রকাশিত কোটালিপাড়ার যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রয়েছে। তিনি পাকিস্তানিদের দোসর ও আল বদর বাহিনীর সহযোগী ছিলেন। আল বদর বাহিনীর সকল ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন তিনি। হাসেম সরদার। অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদারের পিতা হাসেম সরদারের নাম কোটালীপাড়ার যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রয়েছে।

আবদুল কাইয়ুম মুন্সি। জামালপুর বকশিগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদের পিতা আবদুল কাইয়ুম মুন্সির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গত ৬ এপ্রিল জামালপুর আমলী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মালিচর নয়াপাড়া গ্রামের সিদ্দিক আলী এ মামলা দায়ের করেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-যারা যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দেয় তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। ধানের শীষকে ভোট দেয়া মানে দুর্নীতি, লুটপাট ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয়া। প্রধানমন্ত্রী, আপনি বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের কথা তো বললেন না? এটা কে লুট করেছে? সব ব্যাংকগুলো লুটপাট করে খালি করেছে কারা? শেয়ার বাজার লুট করেছে কারা? আপনার অর্থমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন-এই সরকারের আমলে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। আপনিই তো জামালপুরের নুরু রাজাকারের গাড়িতে প্রথম পতাকা দিয়েছেন। এখনও আপনার দলে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভিড়। জনগণকে প্রতারিত করে প্রধানমন্ত্রী আবারও মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করে চলেছেন।

রিজভী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, এমন অভিযোগে এক ডজন ব্যক্তির বিচার করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের কথিত স্বপক্ষ শক্তি দাবি করে এ বিচার করলেও তাদের দলে থাকা রাজাকারদের ব্যাপারে একেবারে নিরব। এ দলটিতে রয়েছে কুখ্যাত রাজাকার, আল বদর, আল শামস, গণহত্যাকারী, গণধর্ষণকারী, অগ্নিসংযোগকারীসহ অসংখ্য ব্যক্তি স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী লিপ্ত ছিল। এই ব্যক্তিরাসহ তাদের সন্তান-সন্তুতি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা বা তাদের টিকিটে নির্বাচন করছেন। কিন্তু এখন তারা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সময় বক্তৃতায় বলেছেন, আওয়ামী লীগে রাজাকার থাকলে দেখিয়ে দেন-আমরা তাদের বিচার করবো।