ইউপি সদস্য থেকে বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী ছালমা বেগম

ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বড়ইয়া ইউনিয়নের মেয়ে ছালমা বেগম। বিশখালির ভাঙ্গল পারে বেড়ে ওঠা ছালমার স্বামীর বাড়িও একই গ্রামে। হত দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া ছালমা বেগমের লেখাপড়ার দৌড় তেমন না হলেও গানের প্রতি ভালোবাসা শত দারিদ্রতাও কমাতে পারেনি। যদিও গান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছিল না ছালমার। ছোটবেলা থেকেই গুনগুন করে গাওয়া গানের সঙ্গে বেড়ে ওঠা তার। মানবিক গুনাবলীর জন্য হয়েছেন ইউপি সদস্য। সে এখন বাউল ছালমা হিসেবে পরিচিত। আর সেই শক্তি দিয়েই গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ এর অডিশনে সে পল্লীগীতির তালিকাভুক্ত শিল্পী হয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের।

উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের এক দরিদ্র কৃষক ইয়াকুব আলী মেয়ে এবং ৯ নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় সমাজকর্মী ও সাংবাদিক আলমগীর শরিফের স্ত্রী এবং ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য। সালমা বেগম ইউপি সদস্য হিসেবেও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। পরিশ্রমী বাবার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ছোটবেলায় মাটি কাটা, ফসলি জমিতে কাজ করা, গাছে ওঠা, মাছ ধরা, নৌকা চালানোসহ গ্রামীণ জীবনে একটু সুখের আশায় অনেক পরিশ্রম করেছেন তিনি। মানব সেবায় তার প্রতিনিয়ত ছুটে চলাই এই জনপ্রিয়তার কারণ। মানবসেবার পাশাপাশি প্রতিনিয়তই করে থাকেন কণ্ঠের সেবা। তাইতো আজ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মত জায়গায় অবস্থান করে নিয়েছেন।

পিতার আর্থিক সংকটের কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে আর উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করার ভাগ্য হয়নি ছালমার। বিদ্যালয় থেকে স্থানীয় সংগীত শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক এর হাত সংগীতচর্চা শুরু করেন ছালমা। তার গান পরিবেশনে মাধ্যমে ইতোমধ্যেই উপজেলা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।

মানুষের কোনো বিপদের খবর শুনলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করে ছালমা। গান পরিবেশনের ফলে তার শৈল্পিক চাহিদা দিন দিনই বাড়তে থাকে। বেশিরভাগ বাউল সংগীত পরিবেশন করায় ‘বাউল ছালমা’ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। ২০২১ সালের ২১ জুন অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে বই প্রতীকে বিজয়ী হন তিনি। ২০২২ সালে রাজাপুর উপজেলা ও ঝালকাঠি জেলা পর্যায়ে “সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী” বিষয়ের উপর শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ পেয়ে যান ছালমা। বাউল ছালমা নামে পরিচিতি লাভ করা ছালমা বেগমের গানে যেমন দক্ষতা তেমন সামাজিক বিভিন্ন ভালো কর্মকাণ্ডের কারণেও আলোচিত। অদম্য মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলার কারণে আজকে তিনি হয়েছেন রাজাপুর উপজেলা ও ঝালকাঠি জেলার শ্রেষ্ঠ জয়ীতা। পেয়েছেন ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসে জেলার অপরাজিতা নেটওয়ার্ক’র সম্মাননা স্মারক। গান গেয়ে তিনি অর্জন করেছেন একাধিক সনদ ও সম্মাননা স্মারক। এছাড়াও নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সেলাই, কৃষি কাজ, হাস মুরগী ও গবাদিপশু পালন, মাছ চাষসহ একাধিক প্রশিক্ষণের সনদ আছে তার দক্ষতার ঝুলিতে।

গানের প্রতি তার টান এবং ভালোবাসা দেখে স্থানীয় সংগীতশিল্পী আব্দুর রাজ্জাক তাকে গান শেখানোর দায়িত্ব নেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতপ্রেমী হওয়ায় নিজেই অর্ধশতাধিক গান রচনা, সুর দেওয়া ও সংগীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি গীতিকার ডা. জহিরুল ইসলাম বাদল’সহ বিভিন্ন লেখকের লেখা প্রায় চার শতাধিক বাউল গানের মৌলিক শিল্পীর খ্যাতি অর্জন করে। গুরুর শিক্ষা পেয়ে তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার জিতে নেন। এরপরে স্বামীর ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টায় আজকে ছালমা বেগম এ পর্যন্ত এসেছেন। জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমন্ত্রিত হয়ে বাউল,পল্লীগীতি, লোকগীতি, ভাওয়াইয়া, ছায়াছবি ও ফোক গান গেয়ে থাকেন ছালমা। যার কারণে আজ তিনি দেশব্যাপী বাউল ছালমা হিসেবে পরিচিতি অর্জনের সৌভাগ্য হয়। ইতোমধ্যেই তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে পল্লীগীতির অডিশনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে সংগীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।