ইফতার রাজনীতিতে বিএনপি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা হতাশায় থাকা নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে চলতি রমজান মাসে ইফতার রাজনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। রমজান মাসজুড়ে চলবে ইফতারের মাধ্যমে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে দলীয় কোন্দল ও দুর্বলতাগুলো দূর করা হবে। রমজানকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতায় সরকার সেভাবে বাধাও দিতে পারবে না। এ সুযোগ তারা কাজে লাগাচ্ছে। এজন্য এজন্য প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের ১৫১টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে চলছে ইফতার আয়োজন। কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একত্রিত হবেন নেতা-কর্মীরা। এতে দেশজুড়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে এবং নেতা-কর্মীদের মনোবল আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

জানা গেছে, রোজার মাসে বিএনপির সিনিয়র নেতারা তৃণমূলে যাচ্ছেন। নিজের এলাকা ছাড়াও অন্যান্য জেলায় যাবেন গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এ সময় তারা স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হবেন। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পূর্ণাঙ্গ ও পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপি। পাশাপাশি বিভিন্ন মিত্র দল এবং জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। এভাবে পুরো রমজান মাসেই ঘরোয়া রাজনীতি আর ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকবেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সব মিলিয়ে রোজার মাসকে দল গোছানোর জন্য সাংগঠনিক মাস হিসেবে নিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সরকারদলীয় লোকদের লুটপাট ও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি রমজানেও সাধ্যমতো জনগণের পাশে থাকছে এবং থাকবে।
গত ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান। প্রথম রোজায় এতিম ও আলেম-উলামাদের সম্মানে ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভা হয়েছে। ২০ তারিখে হয়েছে পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান। ২৪ মার্চ কূটনীতিক ও ২৮ মার্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজনের কথা রয়েছে। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, উত্তরে ৭১টি ওয়ার্ডে ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। এতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, দক্ষিণে ৮০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড। সাত জোনের সাতটি ওয়ার্ড, সে হিসাবে প্রতিদিনই একটি করে ইফতার থাকবে। সাত রোজা থেকে দক্ষিণের ওয়ার্ডের ইফতার আয়োজন শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে ইফতারের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য জেলা বিএনপির নেতারা থানা-উপজেলায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলের তদারকি করবেন। আর উপজেলার নেতারা ইউনিয়নের ইফতার তদারকি করবেন। ইউনিয়ন নেতারা তদারকি করবেন ওয়ার্ড পর্যায়ের অনুষ্ঠান। আর জেলার ইফতার তদারকি করা হবে কেন্দ্র থেকে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে জেলার নেতারা কবে, কোথায় ইফতার মাহফিল আয়োজন করবে কেন্দ্র থেকে সে তালিকা করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরের ইফতারে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কারাবন্দি, বিভিন্ন সময়ে আহত, নিহত ও নিখোঁজ নেতা-কর্মীদের পরিবার এবং কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে বেশি করে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইফতার অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ না করার কথা বলা হয়েছে।