এক সময়ের ‘নিষিদ্ধ’ ফখর জামান এখন ‘দেবতা’!

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। স্কুলে পড়ার সময়টাতেই নিজ গ্রামে, নিজ এলাকায় ক্রিকেট খেলতে পারতেন না ফখর জামান। স্থানীয় ক্রিকেটে ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়েছিল তাকে! এমনকি তার আপন বড় ভাই আসিফও ছোট ভাই ফখন জামানকে খেলতে দিতেন না ক্রিকেট। ভাগ্য আর সৃষ্টি কর্তার আশীর্বাদে সেই ‘নিষিদ্ধ’ ফখন জামানই এখন নিজ গ্রাম ক্যাটল্যাং এবং এলাকার মানুষদের কাছে ‘ক্রিকেট দেবতা’! একটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর ৪টা ম্যাচ কিভাবেই না ঘুরিয়ে দিল ফখন জামানের জীবনের চাকা!

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয়ের পর বাড়ি ফিরেই পেয়েছেন দেশবাসীর উষ্ণ অভ্যর্থনা। খােইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মার্দান জেলার নিজ গ্রামে ফিরে সিক্ত হন কাছের মানুষদের অকৃত্রিম ভালোবাসায়। সেই অভ্যর্থনা, সংবর্ধনার ঢেউ এখনো বলছেই। যেখানেই যাচ্ছেন, ভালোবাসা আর ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে মানুষ। জাতীয় বীরকে কাছে পেয়ে তুলছেন সেলফি। পোস্ট দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। তা মুহূর্তেই ভাইরায় হয়ে দেশ পাকিস্তানের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে।

ফখন জামানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক গত ৩০ মার্চ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। ওয়ানডে অভিষেক এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে। এর পর থেকেই বদলে যেতে থাকে তার দুনিয়া। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে (১০৬ বলে ১১৪) বনে গেছেন নায়ক।

স্কুল জীবনে নিজ গ্রাম তথা স্থানীয় ক্রিকেটে ফখর জামান অবশ্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তার অশেষ প্রতিভার কারণেই! খুব বেশি অনুশীলন না করলেও ব্যাট হাতে ফখন জামান ছিলেন এলাকার সবার সেরা। গ্রামের, স্কুলের সহপাঠি বোলারদের পিটিয়ে তুলোধুনে করতেন। এই কারণেই তার সঙ্গে কেউ খেলতে চাইত না। স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচ হলেই ফখন জামান থাকতেন নিষিদ্ধ!

সেই স্মৃতিচারণা করে পাকিস্তানের ২৭ বছর বয়সী নতুন ক্রিকেট তারকা বলেছেন, ‘স্কুল ক্রিকেটে আমি শক্ত বলের (ডিগ বল) এক-দুইটা ম্যাচ খেলেছিলাম। তাতে আমি বেশ কিছু রান করি। এরপর পুরো এলাকায় আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার ছেলেরা বলে, সে শক্ত বলের খেলোয়াড়। তার সঙ্গে খেলা যাবে না।’

গ্রামের অন্য ছেলেদের সঙ্গে সেই ভাইটি তাকে ক্রিকেট খেলতে দিতে চাইত না, সেই আসিফ ছোট ভাইয়ের কীর্তিতে বিমোহিত। পুরোনো সেই স্মৃতিচারণা করে আসিফ বলেন, ‘আমরা তাকে খেলায় নিতাম তা। তারপরও সে ক্রিকেট খেলঅ ছাড়েনি। আজ সে নায়ক। সে এখন আমাদের ক্রিকেট-দেবতা।’

ফখন জামান নিজেও কখনো ভাবেননি ক্রিকেটেই ক্যারিয়ার গড়বেন। স্কুলের পাট চুকিয়ে তিনি বরং যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। কিন্তু ক্রিকেট প্রতিভা তার রক্তেই। পাকিস্তান নেভি দলের হয়েও তাই খেলেন একাদিক ম্যাচ। তার প্রতিভায় অভিভূত হয়ে পাকিস্তান নেভির ক্রিকেট দলের কোচ নাজিম খানই তাকে ক্রিকেট খেলায় মনোযোগ দিতে বলেন। সেটা ২০১৩ সালের ঘটনা।
কোচ নাজিমের পরামর্শ মতো সে বছরই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। এরপর কেবলই স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে এগিয়ে চলা। ৪ বছরের মাথায়ই তিনি পরিণত জাতীয় নায়কে। দেশবাসীর অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দীর্ঘদেহী ফখন জামান ঠিক করে ফেলেছেন ভবিষ্যত লক্ষ্য, পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চান দীর্ঘ দিন।