এমপির জন্য সকাল-দুপুর পর্যন্ত রোদে দাঁড়িয়ে শিশুরা

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

রোববার দুপুরে পৌর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। অনুষ্ঠানে তার আগমন উপলক্ষে সকাল থেকে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সভাস্থল থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত লাল গালিচার দুই পাশে প্রখর রোদের মধ্যে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় শিশুদের। বিষয়টি এমপির নজরে পড়লেও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত। এই শিশু সনদের ২০১৩ আইনের নবম অধ্যায়ে শিশু মতের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করানো যাবে না বলে উল্লেখ আছে। এতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এমন কাজ করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা এক (১) লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

এরপরও পাঁচবিবি পৌরসভার শহীদ আলাউদ্দিন মিউনিসিপ্যাল বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডেকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রখর রোদের মধ্যে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোদে দাঁড়িয়ে এমপির জন্য অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে শিশুরা। অনেক শিশু মাঝেমধ্যে ছায়ায় গিয়ে আশ্রয় নিলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবার লাইনে এনে দাঁড় করিয়ে দেন। দুপুরে শিশুদের ভিড়ের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রোগ্রাম অফিসার আজমি আখতার বলেন, নীতিগতভাবে শিশুদের এভাবে ব্যবহার সমর্থন করা যায় না। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য এমন কাজ করা হচ্ছে। অবশ্যই এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা উমা রানী দাস বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

বিষয়টি স্বীকার করে শহীদ আলাউদ্দিন মিউনিসিপ্যাল বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান বাচ্চু বলেন, বিদ্যালয়ের কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে শিশুরা প্রধান অতিথিকে মানপত্র দেয়ার জন্য যায়। যেহেতু অনুষ্ঠানটি পৌরসভার এবং বিদ্যালয়টি পৌরসভার সেহেতু শিশুদের অনুষ্ঠানে পাঠানো হয়। শিশুদের পেছনে শিক্ষকদেরও দাঁড় করে রাখা হয় যেন তাদের অসুবিধা না হয়।

এ বিষয়ে জানতে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিবকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আলম বলেন, আমি শুধু সভাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, বিষয়টি আমি খেয়াল করিনি। যখন বিষয়টি আমার নজরে পড়েছে তখন কোনো উচ্চবাচ্য না করে অনুষ্ঠান শেষ করে চলে আসি।