কক্সবাজারে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর স্রোত, চলছে মানবেতর জীবন

মোঃ আমান উল্লাহ, কক্সবাজার : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান। চলছে সামরিক বাহিনির বর্বর নির্যাতন। পাহাড়ি পথ আর নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যেন স্রোতের সমান্তরাল। সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অব্যাহত রয়েছে অনুপ্রবেশ। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাটাতারের বেঁড়া পার হলেই ওপাড়ের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কত ভাঙা-গড়া, উত্থান-পতন, মানুষের হাসি-কান্না ও আনন্দ-বেদনার নীরব সাক্ষী মিয়ানমারের গ্রাম-জনপদ।

নির্যাতন ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কারণে স্থানচ্যুত কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন বিভিন্ন দেশ, ব্যক্তি ও প্রতিষ্টান। প্রতিদিন কেউ না কেউ সামান্যটুকু সহযোগীতার হাত বাড়াচ্ছে। এরপরেও তা অপ্রতুল।

বাংলাদেশে উদ্ধাস্তু হয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের এখন দুই তীরই ভাঙছে। ঠাঁই পায়নি মিয়ানমারে। আশ্রয়হীন এদেশেও। রোহিঙ্গা ভারে বেদখল হয়ে গেছে জেলার সরকারী বনভুমি, সংকুচিত হচ্ছে এখানকার গ্রামীন জনপদ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলাবাসির জীবন যাত্রা।

বন, পাহাড়, রাস্তারধার যেখানে যাই সেখানে চোখে পড়ছে রোহিঙ্গাদের জটলা, শরণার্থী ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকার দীর্ঘ জনপদে শুধু রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। ফলে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গারা জাতিগত ক্ষত আর আতঙ্ক বুকে নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে এপাড়ে।

সেদেশে রোহিঙ্গাদের উপর নিপিড়ন শুরু হলেই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাড়তে থাকে অনুপ্রবেশ। তবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবার। নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন নিয়েই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশও ঘটেছে এবারে। কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভিড় জমাচ্ছে রোহিঙ্গারা। স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমছিম থেকে হচ্ছে চিকিৎসকদের। চিকিৎসার অভাবে রোগিঙ্গাদেও মাঝে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

এবারের সংঘাতে এপর্যন্ত অন্তত পক্ষে ৫০ হাজার পরিবারের দুই লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে স্থানচ্যুত হয়ে টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের বাস। বিপুলসংখ্যক এই অধিবাসীকে মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। সেখানে চলাচলের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধেরও শিকার হয়ে আসছিল রোহিঙ্গারা।