কলাপাড়ায় ধার করা অস্ত্রের অপারেশনে জীবন বাঁচলো প্রসূতী মায়ের

মাত্র ১৮ বছর বয়সী তরুণী তাইফা। ভালোবেসে বিয়ে করে বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামী বাড়ি চলে আসেন ২ বছর আগে। আর স্বল্প উপার্জনক্ষম প্রিয় মানুষের বন্ধনে বেজয় খুশিতে চলছিল তার সুখের সংসার। তবে এই গৃহবধূ সন্তান সম্ভাবা হলে আর্থিক সঙ্কটে উন্নত চিকিৎসার অভাবে দারুনভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিত্য খেটে খাওয়া স্বামী বাড়ির লোকজনের পক্ষেও তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করাও ছিল চিন্তার কারণ। তবে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পাশে দাঁড়ান একজন মানবিক চিকিৎসক। নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে নিজ খরচে সকল পরিক্ষাসহ ওষুধ কিনে দিয়ে অস্ত্রপাচার (সিজার) সম্পন্ন করেন।

৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জুনায়েদ হোসেন লেলিন। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে মা এবং শিশুর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত রেখে সাধারণের প্রশংসায় ভাসছেন। আর প্রথম সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় কোলে তুলে আনন্দের অশ্রম্ন ঝড়াচ্ছেন তরুণী গৃহবধূ তাইফা। তিনি উপজেলার বালীয়াতলী ইউপির তুলাতলী গ্রামের ট্রলিচালক রিপন হাওলাদারের স্ত্রী।

গত দুদিন আগে সন্তান প্রসবের অতিরিক্ত ৯ দিন পেরিয়ে শরীরে পানি সঙ্কট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এই গৃহবধূ। এসময় বন্ধ হয়ে যায় গর্ভে থাকা সন্তানের নড়াচড়া। ঠিক সেই সময়ে চিকিৎসক লেলীন মানবিক যুবক মিন্টুর সহযোগীতায় জরুরি রক্ত সংগ্রহ করার পাশাপাশি নিজ খরচে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।

তাইফার ননদ শিরিনা আক্তার জানান, আমার ভাবি খুব অসুস্থ ছিল। ডাক্তার স্যার সব নিজের টাকায় করছেন। অপারেশন বিল, টেষ্ট, ওষুধ সবকিছু তার পক্ষ থেকে দেছে। আমরা বুঝি নাই ওনি এতো ভালো।

মানবিক এই চিকিৎসক জানান, হঠাৎ করেই পরপোকারী মিন্টু আমাকে জানান, খুবই অসুস্থ একজন প্রসূতি মা অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমনকি পেটের বাচ্চার পালস অনেকটা কমে গেছে। গিয়েও দেখলাম তাই, ডেলিভারী ডেট অনেকদিন ওভার হয়েছে। ফলে দ্রুতই সিজার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ওই মূহুর্তে হাসাপাতালে জীবানু নাশক অটোক্লেভ মেশিন না থাকায় গভীর রাতে বিপদে পরে যাই।

পরে স্থানীয় একটি ক্লিনিক থেকে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করি। তবে রোগীর কন্ডিশন মোটেই ভালো ছিল না। হয়তো একটু দেরি হলে মা, বাচ্চা দুজনেই মারা যেতে পারতো। তবে ঝুকি থাকলেও উপরওয়ালার ইচ্ছায় সফল অপারেশন করেছি। এখন মা, বাচ্চা দুজনই সুস্থ আছে।

তিনি বলেন, টাকা নেই সেই কারনে চিকিৎসা হচ্ছেনা। এমন কেউ থাকলে তিনি যেন আমার সাথে যোগাযোগ করেন। কেউ লজ্জা পেলে গোপনে যোগাযোগ করলেও আমি নিজ খরচে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করবো।