কলারোয়ায় মায়ের স্বপ্ন পূরণে ফার্নিচার মিস্ত্রির ছেলের ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার গল্প

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। কখনো তার চাইতেও বড়। ঘুমের মধ্যে নয়, বাস্তবে যে স্বপ্নের জন্য ঘুম আসে না সেটায় আসল স্বপ্ন। সাতক্ষীরার কলারোয়ার রায়হান কবিরের জীবনটাও তেমনি। অতিসম্প্রতি ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। মায়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার।

কলারোয়া পৌর সদরের তুলশীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কাঠমিস্ত্রি আজিজুর রহমান মোড়ল ও গৃহিনী বিলকিস খাতুনের সন্তান রায়হান। বেত্রাবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি’তে ‘এ-’ ও শেখ আমানুল্লাহ কলেজ থেকে ২০১১ সালে এইচএসসি’তে ‘এ’ পেয়ে মানবিক বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি বাগেরহাটের একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। দিতে থাকেন বিসিএস পরীক্ষাও। সম্প্রতি প্রকাশিত বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। তবে রায়হান কবিরের জীবনের গল্প এতো ছোট নয়। মায়ের স্বপ্ন ছিলো বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়া। তবে দারিদ্র ছিলো বাঁধা। সেই বাঁধা ডিঙিয়ে যেতে সবসময় সহযোগিতা করেছে তার মা।

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় একেক সময় একেকটা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। এসএসসি পরীক্ষা শেষে গরিবের ছেলে হওয়ায় পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা ছিলো। তবে আমার মায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর অনুপ্রেরণায় থেমে থাকিনি। এইচএসসি পাশের পর ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে ভর্তি হই। অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করি। এরমধ্যে এক বন্ধুর অনুপ্রেরণায় বিসিএস দেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। যতক্ষণ আমার চোখ খোলা থাকতো, ততক্ষণ পড়তাম। টিউশনি করতাম। কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতাম। শিক্ষার্থীদের পড়া দিয়ে আমি নিজে পড়তাম। বিসিএসে প্রিলি-রিটেনে টিকে গেলাম। ভাইভাতে স্যাররা আমাকে নানা প্রশ্ন করে যাচাই করার চেষ্টা করলেন। আমি সুন্দরভাবে উত্তরগুলো দিয়েছিলাম। আমি তাদের গান গেয়ে শোনাই।’

রায়হান কবির আরো বলেন, ‘বাবা-মা সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে মায়ের অবদান বেশি। মায়ের স্বপ্ন ছিলো ভালো কিছু করি।’