ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ১ টাকা ফি জরিমানা জমানার সমাপ্তি

দুপুর ১২টা। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ভবনের নিচতলার সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ব্রিফিংয়ের অপেক্ষায় বসে আছেন।

নির্ধারিত সময়ে সোয়া ১২টায় উপস্থিত হলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। আসনে বসেই সবাইকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘আজ খুব বেশি লম্বা সময় নেব না, দ্রুত শেষ করে দেব। আপনারা সহযোগিতা করলে দ্রুত বিফ্রিং শেষ হবে।’

প্রথমেই তিনি জানান, আজ (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনানিবাস আইন-২০১৭ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়।

নতুন প্রস্তাবিত আইনে বিভিন্ন ফির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ১৯২৪ সালের প্রণীত ক্যান্টনমেন্ট অ্যাক্ট-১৯২৪ এর ৯১ ধারায় ফি’র পরিমাণ ছিল মাত্র এক টাকা। সেটি বৃদ্ধি করে পাঁচশ টাকা করা হয়েছে।

তার মুখে এক টাকা জরিমানার কথা শুনে গণমাধ্যম কর্মীরা নড়েচড়ে বসেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘৯৪ বছর আগে এক টাকার অনেক দাম ছিল। এছাড়া পুরনো আইনে যে ৪৩টি বিষয়ে আর্থিক জরিমানার উল্লেখ ছিল সেগুলোর পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

এক নজরে সেনানিবাস আইন-২০১৭
১. রং সাইডে গাড়ি চালালে সর্বনিম্ন ২ হাজার, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা।
২. তথ্য প্রদানে অবহেলা ও রায় প্রকাশে বাধ্যবাধকতার জন্য সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা।
৩. দালান নির্মাণে বিলম্বে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।
৪. আতশবাজি ও আগ্নেয়াস্ত্র ফুটানোর জন্য কমপক্ষে ৩ হাজার, সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা।
৫. বসতভিটার জরাজীর্ণ অবস্থার জন্য কমপক্ষে ৩, সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা।
৬. সড়কে সরকারি ভূমি খননের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ হাজার, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
৭. লাইসেন্স ব্যতীত বাজার বা কসাইখানাকে কমপক্ষে ৩ হাজার, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
৮. বিনা লাইসেন্সে ব্যবসার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ হাজার, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
৯. পশুকে আবর্জনা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা।
১০. অবৈধভাবে পানির অপচয়ে কমপক্ষে ৩ হাজার, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
১১. সরকারি কাজে বাধাদানে কমপক্ষে ৩ হাজার, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা।

তিনি জানান, তথ্য প্রদানে অবহেলা ও রায় প্রকাশে বাধ্যবাধকতা ১৯২৪ সালের ১০৩ ধারায় জরিমানার পরিমাণ ছিল মাত্র একশ টাকা। প্রস্তাবিত নতুন আইনে সেটি সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

পুরনো আইনে দালান সমাপ্তকরণ বিষয়ে জরিমানা ছিল না। এক্ষেত্রে তিনবারের বেশি সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রত্যেকবার ২০ হাজার ও পঞ্চমবার সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে জরিমানা ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়।

সেনানিবাসের ভেতরে রং সাইডে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে আগে মাত্র ৫০ টাকার বিধান থাকলেও বর্তমানে সেটি কমপক্ষে দুই হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়। তবে সিনেমা প্রদর্শনীর জন্য দুইশ টাকা ফি থাকলেও বর্তমানে কোনো ফি থাকছে না।

তিনি আরও জানান, আতশবাজি ও আগ্নেয়াস্ত্র ফুটানোর জন্য আগে মাত্র ৫০ টাকা জরিমানা থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে কমপক্ষে তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। দালান ও ইত্যাদি নিরাপত্তা বিধানের ক্ষমতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো শাস্তি না থাকলেও বর্তমানে সর্বনিম্ন তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়।

বসতভিটার জরাজীর্ণ অবস্থার জন্য আগে ৫০ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও নতুন আইনে কমপক্ষে তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়।

দালানের অত্যাবশ্যকীয় মেরামত ও পরিবর্তন করানোর ক্ষমতার ক্ষেত্রে আগে শাস্তির বিধান না থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে কমপক্ষে তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আগে মাত্র পাঁচশ টাকা থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে কমপক্ষে ২০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাবনা রয়েছে।

এছাড়া সড়কে সরকারি ভূমি খননের ক্ষেত্রে মাত্র ২০ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও বর্তমানে সেটি কমপক্ষে দুই হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়।

বেসরকারি বাজার বা কসাইখানা স্থাপনে আগে ৫০ টাকা জরিমানার শাস্তির ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা করা হয়।

তিনি জানান, লাইসেন্স ছাড়া বাজার বা কসাইখানা খোলার ক্ষেত্রে জরিমানা ৫০ টাকার স্থলে কমপক্ষে তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার প্রস্তাবনা করা হয়। বিনা লাইসেন্সে ব্যবসার ক্ষেত্রে জরিমানা দুইশ টাকার স্থলে কমপক্ষে তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। পশুকে আবর্জনা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে মাত্র ৫০ টাকা জরিমানা থাকলেও বর্তমানে সেটি অনধিক পাঁচ হাজার টাকা করা হয়। এছাড়া অবৈধভাবে পানির অপচয়ে ৫০ টাকা জরিমানার বদলে বর্তমানে কমপক্ষে তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে সরকারি কাজে বাধাদানের ক্ষেত্রে মাত্র একশ টাকা শাস্তির বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে কমপক্ষে তিন হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ টাকার প্রস্তাবনা রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ক্যান্টনমেন্ট অ্যাক্ট-১৯২৪ অনেক পুরনো আইন। এ আইনটিকে পুনর্বিন্যাস করে ২০১৭ সালে অনুমোদনের জন্য আনা হয়। শত বছরের এ আইনে ২৯২টি ধারা ছিল। সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমে এটিকে ২৫৮টিতে আনা হয়।

তিনি আরও জানান, অপ্রয়োজনীয় ধারা বাদ ও নতুন কিছু ধারা যোগ করা হয়েছে। ৯০ বছরের পুরনো ফি ও জরিমানার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।