খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ৯টি উপজেলাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সারাদেশে ২২হাজার ১০১টি পরিবারের ৪র্থ পর্যায়ের(২য় ধাপ) ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে গৃহ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এরমধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৮৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে নতুন গৃহ ও ভূমি প্রদান করা হয়েছে।

বুধবার (৯ই আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে জেলা-উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর লক্ষ্যছড়ি উপজেলায় খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনের ২৯৮নং সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ গৃহ ও ভূমি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্যছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া। এসময় বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) ফেরদৌসী বেগম, উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেম্রাচাই চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আব্দুল ওহাব খন্দকার, আব্দুর রশিদ মোল্লা প্রমুখ।

এসময় সহকারি কমিশনার(ভূমি) হোসনে আরা, থানার অফিসার ইনচার্জ মিনহাজ মাহমুদ ভূইয়াসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, উপকারভোগী, জনপ্রতিনিধি, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ক্রইসাঞো চৌধুরী, জেলা পরিষদের সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিক শাহিনা আক্তার, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা বাঁশরি মারমা, মহিলা নেত্রী ফারহানা আজম, সাংগঠনিক সম্পাদিকা অন্তরা খীসাসহ জেলা সদরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সব ভূমিহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এই ধারাবাহিকতায় আজ সারাদেশে ২২হাজার ১০১টি অসহায় পরিবারকে নতুন গৃহ ও ভূমি হস্তান্তর করা হয়েছে।

জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলার জন্য ৭হাজার ২৮অসহায় পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত জমিসহ ৬হাজার ৪৪৫ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ এ জেলা ৫৮৩টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

দীঘিনালায় পাকা ঘরসহ দলীল পেল ১৫০ পরিবার:
সারাদেশের ন্যায় দীঘিনালায়ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। দীঘিনালা উপজেলা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরাফাতুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাশেম। সহকারী কমিশনার ভূমি, আবুল হাসনাত খাঁনের স ালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সীমা দেওয়ান, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রাজু, দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম জানান, আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ভার্চুয়ালি উদ্ধোধনের পর দীঘিনালা উপজেলায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ১শত ৫০জন অসহায়, গরিব, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তাদের মাঝে প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এর আগে দীঘিনালায় আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় ১হাজার ৯৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদান করা হযেছে। এর মধ্যে ১ম ও ২য, ৩য় ও চতুর্থ পর্যায়ে(১ম ধাপে) ৯৪৭টি গৃহ প্রদান করা হয়।
এব্যাপারে দীঘিনালা উপজেলার মুসলিম পাড়া গ্রামের আজমতি বেগম(৬০) জানান, আমরা মা মেয়ে দুজনই বিধবা। আবার দুজন নাতি রয়েছে। ভাঙ্গা ঘরে থাকতে হতো। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।

রামগড়ে ৬৫ ভূমিহীন পরিবার পেলেন আশ্রয়ণের ঘর:
খাগড়াছড়ির রামগড়ে এবার ৬৫টি দুস্থ ও ভূমিহীন পরিবার পেলেন আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর। উপজেলা অডিটরিয়ামে এ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মানস চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যন হাছিনা আক্তার, রামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহা আলম মজুমদার, পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর রাসগড়ের ৬৫টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের হাতে ঘরের চাবি ও ভূমির দলিল হস্তান্তর করা হয়।

রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) মানস চন্দ্র দাশ জানান, ৪র্থ পর্যায়ে দ্বিতীয় ধাপে এ ৬৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রামগড় পৌরসভার হকটিলা নামক এলাকায় ৩৭টি, রামগড় ইউনিয়নে ২৩টি ও পাতাছড়া ইউনিয়নে ৫টি রয়েছে।

তিনি আরও জানান, রামগড়ে আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ে ১ম ধাপে মোট ৪৭৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন দুস্থ পরিবারকে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর ও দুই শতক ভূমির দলিল দেয়া হয়। এরমধ্যে রামগড় পৌরসভায় ৫৩, রামগড় ইউনিয়নে ২১৪ পরিবার ও পাতাছড়া ইউনিয়নে ২০৯টি পরিবার রয়েছে।
মুজিববর্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গৃহহীন অসহায় পরিবারদের মাথাগোঁজার জন্য আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪র্থ পর্যায়ে(২য় ধাপ) খাগড়াছড়ির লক্ষ্যছড়ি উপজেলায় আরো ৪০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে।

জানা যায়, লক্ষ্যছড়ি উপজেলায় মোট ১হাজার ২২০টি ঘর উপকারভোগিদের মাঝে গৃহ হস্তান্তর করা হয়।
সূত্র জানায়, ১ম পর্যায় ৩২টি, ২য় পর্যায় ৭০০টি, ৩য় পর্যায় ২৬৮ এবং ৪র্থ পর্যায়ে ১ম ধাপে ১৮০ টি এবং ৪র্থ পর্যায়ে (২য় ধাপে) ৪০টি ঘর নির্মাণ শেষে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১২২০টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

পরে প্রধান অতিথি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় সেলাই মেশিন ও প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের মাধ্যমে ছাগল বিতরণ এবং নবনির্মিত উপজেলা পরিষদ কমপ্লে´ ভবন চত্তরে বৃক্ষ চারা রোপন করেন।