খাগড়াছড়িতে সমতলের সাথে পাল্লা দিয়ে পাহাড়েও উন্নয়ন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সাথে সমতলের পাল্লা দিয়ে পাহাড়েও উন্নয়নের হিড়িক। পাহাড় কি সমতলে চলছে উন্নয়নের জোয়ার। রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, সেতু আরও কতো কী! তবে সমানতালে পিছিয়ে নেই পাহাড়বেষ্টিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান। এই তিন পার্বত্য জেলাতেও এখন ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলছে। সরজমিনে এই ৩টি জেলাগুলোতে ঘুরে ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে দেখা গেছে এমনই চিত্র।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও কোন প্রকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে ১৩,২৯৫বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম আর্থ-সামাজিক দিকে থেকে অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ রয়ে যায়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে বিভিন্নমুখী ও বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।

এ অঞ্চল ধাপে ধাপে উন্নয়নের গতিধারায় যুক্ত হতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে পার্বত্য অঞ্চলের পরিকল্পিত উন্নয়নে চিন্তা শুরু করেন। পার্বত্য এসব জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি উন্নয়নসহ সরকারী চাকুরী ও স্থানীয় চাকুরীতে পার্বত্যবাসীদের যৌক্তিক অংশগ্রহণসহ প্রভৃতি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সরকার পার্বত্য এলাকায় ‘আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ ধারণার আলোকে ১৯৭৬সালে ৭৭নম্বর অধ্যাদেশ বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের(আইসিডিপি) আওতায় ইউনিসেফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে পাড়া কেন্দ্র নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন করে। যা বর্তমানে মানুষের মৌলিক সামাজিক সেবা প্রাপ্তির মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।

সম্প্রতি ৪০০০তম পাড়া কেন্দ্র চালুর মাইলফলকের মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৬লাখ মানুষ ও ১১টি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মৌলিক সামাজিক সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের ধারাকে আরো গতিশীল করছেন বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

বর্তমানে পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবনমান আগের তুলনায় অনেক উন্নত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে দারিদ্রতা যেমন কমে এসেছে, তেমনি জনগণের আয় এবং জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়ন তথা কৃষি, যাতায়াত, শিক্ষা, ক্রীড়া-সংস্কৃতি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, সমাজ কল্যাণ, বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও কারিগরী দক্ষতা উন্নয়নসহ আয় বর্ধনমূলক খাতে বহুমূখী প্রকল্প গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।

পার্বত্য চট্টগ্রাামে কৃষি ও মৎস্য চাষ উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার ২৫টি উপজেলায় দুই পাহাড়ের মাঝে ক্রিকের(ঘোনায় মাছ চাষের জন্য বাঁধ) মাধ্যমে মৎস্য চাষের প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

এরইমধ্যে প্রায় দুদশ ক্রিক নির্মাণ করা হয়েছে। আরো পাঁচ শতাধিক ক্রিক নির্মাণে সম্প্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এসব ক্রিক নির্মাণের ফলে পার্বত্য এলাকায় মাছ চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমান সরকার ভিশন ২০২১বাস্তবায়নকল্পে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আইসিটি ভিত্তিক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বেকার জনগোষ্ঠীকে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবলে রূপান্তর করে আত্ম-কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করাই সরকারের মূল লক্ষ্য।

বর্তমান সরকারের সব সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যয় বিশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগের সরকারের সময় বছরে ৫৪কোটি টাকা ব্যয় করা হতো, সেখানে এখন হাজার কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমতল ও পাহাড়ের মাঝে কোন বৈষম্য রাখেনি। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতা আর সরকরের আন্তরিকতায় গড়ে উঠবে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।